বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, লুটপাটের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা তার প্রধান উদ্দেশ্য।
ঈদুল আজহার ছুটির পর রবিবার প্রথম কর্মদিবসে সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। এসময় বেসরকারি পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে খুব শিগগিরই একীভূত করা হবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, একীভূত হলেও এসব ব্যাংকের কর্মীরা চাকরি হারাবেন না।
আহসান মনসুর বলেন, “লুটপাটের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার আমার প্রধান উদ্দেশ্য। বছরের পর বছর মামলা জিইয়ে রাখা নয়; মামলা করার পরও সমঝোতার মাধ্যমে লুটেরাদের কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব অর্থ আদায়ের চেষ্টা থাকবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে ব্যাংক মার্জারের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব- পরবর্তী সরকার এসে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মার্জার করা হবে।
“এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। কারও চাকরি যাবে না। তবে প্রয়োজনে শাখাগুলো স্থানান্তর করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহরে বেশি, সেসব ব্যাংককে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”
পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, “পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া কোনও সম্পদ উদ্ধার সম্ভব নয়। এজন্য আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনি নথিপত্র তৈরি করতে হবে।
“আমরা চাই আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক- আমাদের দাবি যথাযথ কিনা। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে।”
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) প্রসঙ্গ তুলে আহসান মনসুর বলেন, “আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যেখানে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনা করে সমাধান খুঁজবেন।”
তিনি বলেন, “কোন পথে এগোনো হবে, আদালত নাকি এডিআর- সেটা সরকার নির্ধারণ করবে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।
“দেশীয় সম্পদের জন্য দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনা করতে হবে। এই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি চলছে।”
‘১৫ ডলার বাদে কোনও অর্থই বিদেশে নেইনি’
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় গভর্নরের মেয়ের দুবাইয়ে বিলাশবহুল বাড়ি কেনার খবর ছড়িয়েছে। এই বাড়ি কেনায় গভর্নর আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “৭৬ সালে পড়তে যাওয়ার সময় ১৫ ডলার বাদে কোনও অর্থই বিদেশে নেইনি। আমার মেয়ে আমার চেয়ে ধনী, কাজেই দুবাইয়ে ফ্ল্যাট কিনতে তার কারও সাহায্যের দরকার হয় নাই।”
গভর্নর বলেন, “এই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। এটা পুরোপুরিভাবে বানোয়াট তথ্য এবং ব্যক্তিগত চরিত্র হননের চেষ্টা। যদি কোনও প্রমাণ থাকে আমি একটা ডলার পাঠিয়েছি… আপনারা প্রমাণ নিয়ে আসেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কেউ দেখাতে পারবেন না।”
‘ছেলে-মেয়েরা কী করছে, না করছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়’ মন্তব্য করে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর বলেন, “তারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা বাড়ি কিনবে না গাড়ি কিনবে, কোন দেশে থাকবে, কাকে বিয়ে করবে, না করবে এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই জিনিসটা পুরো অযাচিত চর্চা। এই জিনিসটাতেই আমাদের যাওয়া উচিত নয়।”