Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেইসবুকে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারের পেছনে জান্তা : জাতিসংঘ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
[publishpress_authors_box]

রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতা উস্কে দেওয়া ফেইসবুক পেইজগুলোর পেছনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাত ছিল। জাতিসংঘের এক তদন্তে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বুধবার জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জাতিসংঘের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর আগে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো বেনামি ফেইসবুক পেইজগুলো মূলত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা চালাতো।

ফেইসবুকের বিরুদ্ধেও দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোয় সহায়তার অভিযোগ রয়েছে।

২০২১ সালের শেষদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ফেইসবুকের বিরুদ্ধে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে। তাদের অভিযোগ, ফেইসবুক তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আর এখন মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া (আইআইএমএম) বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীই যে গোপনে ফেইসবুকে ওই ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারের আয়োজন করেছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল আইআইএম প্রতিষ্ঠা করে। মিয়ানমারে সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ এবং ফৌজদারি বিচারের জন্য ফাইল প্রস্তুত করার জন্যই আইআইএম গঠন করা হয়।

আইআইএমএমের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভয় ও ঘৃণা জাগানোর জন্য তৈরি কনটেন্ট ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এজন্য তারা ফেইসবুকে অসংখ্য পেইজ খুলে একটি গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এরপর সেগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারের লাখ লাখ ফেইসবুক ব্যবহারকারীর কাছে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ প্রচার করে।

২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৩টি ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করা কনটেন্ট বিশ্লেষণ করেছে আইআইএমএম। তাদের বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, ফেইসবুক পেইজগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রকাশ্য কোনও সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও সেগুলোর পেছনে গোপনে তাদের হাত ছিল।

এসব পেইজে সেলিব্রেটিদের নিউজ ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির কনটেন্টও প্রকাশ এবং তার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচার করা হতো। জাতিসংঘ এসব পেইজ থেকে প্রচারিত ১০ হাজার ৪৫৮টি ঘৃণামূলক কনটেন্ট চিহ্নিত করেছে। ২০১৮ সালে ফেইসবুক পেইজগুলো ডিলিট করে দেয়।

ওই ৪৩টি পেইজের মধ্যে ছয়টি পেইজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষিদ্ধ ২০ ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তাদের একজন ছাড়া সকলেই প্রকাশ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত ছিলেন।

বাকি ৩৭টি পেইজের ৩০টিতে তদন্তকারীরা ঘৃণামূলক কনটেন্ট শনাক্ত করেছেন। কিন্তু পেইজগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক ছিলো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই পেইজগুলো ভুয়া নামপরিচয়ে চালানো হতো। তবে সেগুলোতে প্রচারিত একই ধরনের ঘৃণামূলক কনটেন্ট দেখে ধারণা করা যায়, সেগুলোও ওই ছয়টির মতোই সেনাবাহিনীর গোপন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

এসব পেইজ থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিত্রায়িত করে তাদেরকে মিয়ানমার ও বার্মিজ জাতিগোষ্ঠীর জন্য হুমকি বলে প্রচারণা চালানো হতো। রোহিঙ্গারা নিজেদের জনসংখ্যা বাড়িয়ে বার্মিজদের জাতিগত বিশুদ্ধতা নষ্ট করবে বলেও ভয় দেখানো হতো।

পেইজগুলোর মধ্যে সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায় সেগুলোর কনটেন্ট নির্মাতা, অ্যাডমিন ও এডিটরদের মধ্যে মিল থেকেও। এ ছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত আইপি অ্যাড্রেস থেকে পেইজগুলোতে নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করা হতো। পেইজগুলোতে প্রায়ই একই ধরনের কনটেন্ট একই সময়ে পোস্ট করা হতো।

তদন্তে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার সময়ও এই ঘৃণা প্রচার অব্যাহত ছিল। সহিংসতা প্রতিরোধ এবং জনগণকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণার প্রচার করেছে, যা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য ইরাবতী

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত