কক্সবাজারের টেকনাফ লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত কয়েকদিন গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ আসলেও সোমবার সন্ধ্যার পর আর আসেনি। এক সপ্তাহের বেশি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের ওপার থেকেও সংঘাতের কোনো শব্দ আসেনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। টেকনাফে গোলাগুলির কোনো শব্দ না আসলেও নাফ নদী এলাকায় আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। এ কারণে মঙ্গলবারও জেলেরা নাফ নদীতে নামেননি।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় থেমে থেমে ব্যাপক গুলি ও মর্টার শেলসহ ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। রবিবার গোলাগুলির শব্দের তীব্রতা কমতে শুরু করে। সোমবার সন্ধ্যার পরপর বেশ কয়েকটি গোলাগুলির শব্দ হয়। তারপর পুরো রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত গোলাবর্ষণের কোনও শব্দ শোনা যায়নি।
এ ইউপি সদস্য জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির কোনও শব্দ না আসলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। একারণে জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। সীমিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় নৌযান চলাচলও।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, সোমবার সকালে ইউনিয়নের ফুলেরডেইল সীমান্ত এলাকা টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট বেশ কিছু গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। রাতে গোলাগুলির কোনও শব্দ আসেনি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার কোনও ধরনের বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি-কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এক সপ্তাহের বেশি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপার থেকে সংঘাতের কোনো শব্দ আসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাঁইশফাঁড়ি এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে স্থবির হয়ে গেছে সীমান্ত বাণিজ্য। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে রাখাইনের মংডু শহর ও আকিয়াব বন্দর থেকে প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন শতাধিক কার্গো ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের (দৈনিক ৮০ থেকে ১৫০ ট্রাক) পণ্য সামগ্রী আনা-নেওয়া হয়।
তবে গত এক মাস দিনে মাত্র ২ থেকে ৩টি কার্গো ট্রলার আসছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সীমান্তে সংঘাত নাফ নদী ব্যবহার করে গভীর সাগরে যাওয়া টেকনাফের ৬ শতাধিক ট্রলারের মালিক ও জেলেদের জীবনযাত্রাও জটিল করে তুলেছে। ট্রলার মালিকরা বলছেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি ট্রলারও সাগরে যেতে পারেনি। ওপারে গোলাগুলির কারণে তাদের মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।