মিয়ানমারে চলমান সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় গত কয়েকদিনের তুলনায় কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর আশপাশের গ্রাম ঘিরে এখন সংঘাত চলছে। যার জের ধরে মিয়ানমারের আকাশে হঠাৎ হঠাৎ দেখা মিলছে হেলিকপ্টারের চক্কর। ওই সময় গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।
তারা আরও জানিয়েছেন, মিয়ানমারের গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়াও উড়তে দেখা যাচ্ছে। গত রবিবার থেকে দিনের বেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল আলম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের গ্রাম থেকেই এ শব্দ ভেসে আসে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে। ওই সময় বিস্ফোরণে শব্দ আসে, আগুনের ধোঁয়াও দেখা গেছে।
টেকনাফের জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দিনের বেলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়। আর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, টানা পাঁচদিন এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাতে শব্দ শোনা গেলেও দিনে শোনা যায় না। একারণে এখনও সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কিত।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের মানুষ এই ৫ দিন গোলাগুলির শব্দ পাননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ
মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের কারণে সিথুয়ের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ আছে পাঁচ দিন ধরে। এ সময়ে সিথুয়ে বন্দর থেকে টেকনাফে আমদানি পণ্যবাহী কোনও কার্গো ট্রলার কিংবা জাহাজ আসেনি।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী শুক্রবার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, রাখাইন রাজ্যের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগের কাস্টমস সুপার বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় সরকার দৈনিক ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গ্রেনেড হামলায় আহত যুবক মারা গেছেন
মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুপ্রবেশকারী একজনের ছোড়া গ্রেনেডে আহত বাংলাদেশি আনোয়ার সালাম মোবারক (৩২) মারা গেছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান।
নিহত আনোয়ার সালাম মোবারক উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নে দক্ষিণ রহমতের বিল এলাকার আবদুস সালামের ছেলে।
ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলতাজ আহমদ জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি মোবারক সীমান্তবর্তী জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী এক যুবককে দেখে আটকানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন ওই যুবক তার হাতে থাকা একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এতে আহত হন মোরবক।
তাকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে আবার আনা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। এভাবে এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মোবারকের মৃত্যু হলো।
তার স্ত্রী মরিয়ম জানান, তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। কৃষিকাজ করেই সংসার চালাতেন মোবারক। প্রতিদিনের মতো সেদিনও জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি।