Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি জেলে নিহত, আহত ২

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে আসে একটি ট্রলার।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে আসে একটি ট্রলার।
[publishpress_authors_box]

বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বাংলাদেশের ফিশিং ট্রলারে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে এক জেলে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ২ জেলে।

বুধবার দুপুরে এ ঘটনার সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী ৭২ মাঝিমাল্লাসহ ছয়টি ফিশিং ট্রলার ধরে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সেগুলো ছেড়ে দিয়েছে তারা।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে এসেছে একটি ট্রলার। ট্রলারে আহত ২ জেলেসহ ১১ জেলে এসেছেন।

বাকি মাঝিমাল্লাকে নিয়ে অপর পাঁচটি ফিশিং ট্রলার বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে সেন্টমার্টিন ঘাটে এসেছে বলে ট্রলার মালিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ঘটনার শিকার ট্রলারগুলোর মালিক টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা। তারা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে মৌলভীর শিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গুলিতে নিহত জেলে মো. ওসমান গনি শাহপরীরদ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীরদ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুলের ট্রলারে কাজ করতেন। গুলিতে আহত দুই জেলেও একই ট্রলারের। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ধরে নিয়ে যাওয়া অপর পাঁচ ট্রলারের মালিক হলেন- শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, প্রয়াত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তার ভাই আতাউল্লাহ ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছ ধরার নৌকায় দেশটির নৌবাহিনী গুলি করে। এসময় তারা জেলেসহ ছয়টি নৌকা আটক করে।

তিনি জানান, গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন এবং দুজন আহত হয়েছেন। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি জানান।

পরে মিয়ানমার নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কাছে একটি ট্রলারসহ জেলেদের হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ ও ১১ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে ফিরেছে।

ফিরে আসা জেলেরা।

ইউএনও জানান, সর্বশেষ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অন্য পাঁচটি ট্রলারসহ ৬০ জেলেকে আটকে রাখার খবর ছিল। এর মধ্যে পাঁচটি ট্রলারও ফিরেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আরও খবর নেওয়া হচ্ছে।

ট্রলার মালিক মতিউর রহমান জানান, প্রথমে দুপুর আড়াইটার দিকে সাইফুলের মালিকাধীন ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে আসে নিহত ওসমানের মরদেহ ও আহত দুই জেলেকে নিয়ে।

বিকাল ৪টার দিকে জেলেদের নিয়ে অপর পাঁচটি ট্রলার সেন্টমার্টিন এসেছে। জেলেদের সঙ্গে আলাপ করে কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশের নৌবাহিনী তথ্য সংগ্রহ করছে। সেন্টমার্টিন থেকে ওই ট্রলারও শাহপরীরদ্বীপ ঘাটে আনা হবে।

ট্রলার মালিক সাইফুল জানান, মাছ ধরার সময় হঠাৎ মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে গুলি চালায়। এরপর ছয়টি ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের ধরে মিয়ানমার নিয়ে যায়। সেখানে তার মালিকাধীন ট্রলারে গুলিবিদ্ধ তিনজনের মধ্যে একজন মারা যান।

বৃহস্পতিবার সকালে তার ট্রলারটি ছেড়ে দেয়। নিহত এবং আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপে পৌঁছায় আড়াইটায়। ৪টায় অপর পাঁচটি ট্রলারও সেন্টমার্টিন এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে।

নিহতের মরদেহ দাফন ও আহতদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান ট্রলার মালিক সাইফুল।

শাহপরীরদ্বীপ ঘাটে ফেরা সাইফুলের ট্রলারের মাঝি নুর হামিদ বলেন, “গত ৬ অক্টোবর (রবিবার) আমি ও ১২ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে যাই। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম মৌলভী শিল এলাকায় ১০-১২ টি ট্রলার পাশাপাশি মাছ ধরছিল।

“বুধবার দুপুরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা একটি স্পিড বোটে এসে গুলি করে ধাওয়া দেয়। পরে আটক করে মিয়ানমার নিয়ে যায়। ওখানে গুলিবিদ্ধ একজন মারা যান। গুলিতে আহত হন আরও দুইজন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহতের মরদেহ ও আহত দুই জেলেসহ ট্রলারটি ছেড়ে দেয়। আড়াইটায় ট্রলার নিয়ে শাহপরীরদ্বীপে আসা সম্ভব হয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছক কোস্ট গার্ডের শাহপরীরদ্বীপের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। আরও দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ নিয়ে জেলেরা ঘাটে ফিরেছেন। মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার পর তারা অপর পাঁচটি ট্রলারও ছেড়ে দিয়েছে।

টেকনাফে দায়িত্বরত নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কাসেম জানান, সাগরে গুলিতে নিহত জেলের মরদেহ কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত