বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ানমার অংশ থেকে দেয়া যায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
যে স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে সেটি মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকা বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ।
তিনি বলেন, “ধারণা করছি সীমান্তবর্তী মিয়ানমার বিজিপির কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কারা এ আগুন দিয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।”
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তমব্রুর বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, সীমান্তে বিজিপি সদস্যদের বিতাড়িত করে তাদের ঘাঁটিতে আরাবান আর্মির শক্ত অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিজেরদের অবস্থান জানান দিতে রাতের বেলা তারা গুলি বর্ষণ করে, দিনে পাহাড়ে নির্মিত বাংকারে অবস্থান নেয়। যা সীমান্তের এপার থেকেও দেখা যায়। সোমবার ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে সঙ্গে কিছু গুলির শব্দও ভেসে এসেছে।
অন্যদিকে টেকনাফের নাফ নদীর ওপার থেকে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি নাফ নদীর ওপার থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার সংবাদকর্মী তাহের নঈম বলেন, “হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের ওপারে নাফনদীতে তোতক নামে একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি মিয়ানমারের চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী এলাকায় বিজিপির ঘাঁটি দখলে নিতে যুদ্ধ চলছে বলে জানা গেছে। এর জের ধরে দ্বীপে অবস্থান নেওয়া কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককে নাফনদীতে নেমে যেতে দেখা যায়।”
এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারেন বলে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান এই সাংবাদিক। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কঠোর নজরদারী রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, “ওপার থেকে যাতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক পাহারায় আছে।”
নাফ নদী পেরিয়ে একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার কথা জানিয়েছেন কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুর লাহিল মাজিদ ।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি শান্তপূর্ণ রয়েছে এবং উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা।
সোমবার দুপুরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে যান এই দুই কর্মকর্তা। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন, পরিদর্শন করেন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোও।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না।
পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ বিজিপিসহ মিয়ানমারের অন্য অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে। ২-৩ দিনের মধ্যে এটা চূড়ান্ত হবে।”
সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবি দেখছে জানিয়ে ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, পুলিশ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে।