বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের গুলি বর্ষণ, মর্টার শেলসহ বিস্ফোরণের শব্দ আরও বেড়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন এবং টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী এলাকা।
পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে এপারে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তবর্তী দুটি বসত ঘরে মর্টার শেল, পাঁচটি ঘরে গুলি এসে পড়েছে। এতে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত এলাকার বসতভিটাও ছেড়েছেন অনেকে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজার সংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মার্টর শেল এসে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে জানালা। ফাটল ধরেছে ঘরের দেওয়ালে। একই সময় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে পড়ে আরও একটি মর্টার শেল।
আনোয়ার হোসেন জানান, গুলি এসে পড়ছে এপারে। এতে ঘুমধুমের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিল সংলগ্ন অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সোমবার রাত থেকে দুই পক্ষের লড়াইয়ের ভয়াবহতা বেড়েছে। এত কম্পন আমরা আর দেখিনি। একেকটি গোলা নিক্ষেপের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। একটি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন লোকজন।”
তিনি জানান, ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া, জলপাইতলী, মন্ডলপাড়া, নয়াপাড়া, কোনারপাড়া, পশ্চিমকুল, বেতবুনিয়া বাজার পাড়া, পাশের পালংখালী ইউনিয়নের উখিয়ার ঘাট, পূর্ব ফাঁড়ির বিল, নলবনিয়া, আঞ্জুমান পাড়া, বালুখালী, দক্ষিণ বালু খালী এলাকা কেপে উঠছে ওপারের বিস্ফোরণে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসছেন অনেকেই। তাদের স্থানীয় লোকজন আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করছে।
এ পরিস্থিতি অনেক মানুষ সীমান্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাইশ পারি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনার পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দু পাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।”
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “টানা ৫-৬দিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী।”
রহমতবিল সীমান্তের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার টানা শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলি এসে পড়েছে তার ঘরেও। সীমান্ত দিয়ে অনেককে পালিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে অন্যত্র যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি জানিয়েছে, সর্বশেষ তথ্য মতে মিয়ানমার থেকে ২২৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে পালংখালী সীমান্ত দিয়ে এসেছে ১১৪ জন। এখানে শুধু বিজিপি সদস্য না, সেনা বাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত সাধারণ নাগরিকও রয়েছে। কতজন আহত রয়েছে বলা যাচ্ছে না। বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই অস্থির মিয়ানমার। কয়েকটি রাজ্যে বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত হচ্ছে সরকারি বাহিনী।
বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে সংঘাত কিছুদিন আগে তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাতে বাংলাদেশের ভেতরে বুলেট-গোলা এসে পড়ছে।
সোমবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে আসা মর্টারের গোলার আঘাতে স্থানীয় এক নারী ও এক রোহিঙ্গা নিহত হন।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবিকে)সহ সশস্ত্র বাহিনীকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও সংসদে জানানো হয়।