মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাত চলছেই, তাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মিছিলও বাড়ছে।
শুরুতে শুধু মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরাই পালিয়ে আসছিলেন। এখন দেশটির সেনাসদস্যও তাতে যোগ হয়েছেন বলে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জানিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, মোট ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি সদস্যের পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমসকর্মী ও সাধারণ নাগরিকরা রয়েছেন।
তবে কারা কত জন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুধু বিজিপির ১১৪ জন বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল।
তিনি বলেন, “পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্র করে বিজিবি নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এবং বাকিদেরও বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।”
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতবিল সীমান্ত দিয়ে এরা পালিয়ে আসেন।
পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যরা রহমতবিলে বিজিবি ফাঁড়িতে রয়েছেন। তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ বিজিবি জমা নিয়ে রেখেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ একদিন আগেই ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিজ দেশের সীমান্তরক্ষীদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আহত।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান জানান, বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আসা নাগরিকদের মধ্যে এ মূহূর্তে ঠিক কতজন আহত, তা বলতে পারেননি বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল।
এদিকে মঙ্গলবার ভোরে ওপার থেকে পালংখালী সীমান্ত দিয়ে ৮ রোহিঙ্গা এসেছে বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান গফুর। তবে এনিয়ে বিজিবির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তে দিয়ে ৫ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছিল। পরে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
সীমান্তের এখনকার পরিস্থিতির বর্ণনায় পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান গফুর বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত অনেক তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে সীমান্ত এলাকা।
সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই অস্থির মিয়ানমার। কয়েকটি রাজ্যে বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত হচ্ছে সরকারি বাহিনী।
বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে সংঘাত কিছুদিন আগে তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাতে বাংলাদেশের ভেতরে বুলেট-গোলা এসে পড়ছে।
সোমবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে আসা মর্টারের গোলার আঘাতে স্থানীয় এক নারী ও এক রোহিঙ্গা নিহত হন।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবিকে)সহ সশস্ত্র বাহিনীকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও সংসদে জানানো হয়।