Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

মিয়ানমারের ৮৬ শতাংশ বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা। ছবি : ইরাবতী
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা। ছবি : ইরাবতী
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে ক্রমশ মার খাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এরই মধ্যে দেশটির ৮৬ শতাংশ এলাকার দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলোর নিয়ন্ত্রণও ধরে রাখতে পারেনি জান্তা সরকার।

সার্বিক কোণঠাসা পরিস্থিতিতে জান্তার পক্ষে এখন রাজধানী নেপিদোকে দখলে রাখাই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার (এসএসি-এম) ও ক্রাইসিস গ্রুপ (অলাভজনক সংস্থা) নামের দুই সংস্থার রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

এসএসি-এম হলো একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সংস্থা। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্থাটির সূচনা হয়।

সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের ৮৬ শতাংশ এলাকায় কার্যত জান্তার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব এলাকায় দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশের বসবাস। ফলে এক অর্থে বিদ্রোহীরাই এখন দেশটি শাসন করছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ছাড়াও বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের দেশটিতে অশান্তির আগুন জ্বলছে।

শুরুর দিকে জান্তা বিরোধীরা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করেছিল দেশটির বিভিন্ন শহরে। কিন্তু এই বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করে জান্তা সরকার। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে গুলি করে হত্যাও করা হয়।

জান্তার এমন প্রতিক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সশস্ত্র রূপ পায়। যেসব জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলো আগে থেকেই নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে লড়াই করছিল, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় দেশটির সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা।

সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণ-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একাধিক গ্রুপ। এসব গ্রুপগুলোই ধীরে ধীরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে।

এসএসি-এম বলছে, জান্তা মিয়ানমারের পর্যাপ্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে তারা রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। জান্তা দেশের ব্যাপক এলাকা ছেড়ে দিয়েছে এবং যেসব এলাকায় এখনও আছে সেখানে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে।

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি : ইরাবতী

মিয়ানমারের শীর্ষ তিন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনী গত অক্টোবরে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে একটি সমন্বিত অভিযান চালায়। এসময় দেশটির উত্তরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বড় অংশই বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। ফলে জান্তা বাহিনী আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

ওই অভিযানের পর বিদ্রোহীরা আরও অভিযান চালায়। এতে বিদ্রেহীরা জান্তা বাহিনীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাড়িয়ে দেয়। জান্তার অনেক সদস্য আত্মসমর্পণ করে। জান্তা এখন কার্যত শুধু মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিদ্রোহীরা দেশের থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার দখল নিয়েছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়েছে। এর ফলে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা সম্প্রসারণ করেছে। একই সঙ্গে তারা স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজয়ের ফলে জান্তার সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাশা বেড়েছে। এই পরিস্থিতি জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এমন যে, তাকে অপসারণে সেনাবাহিনীর মধ্যেই চক্রান্ত হতে পারে।

উভয় সংস্থার রিপোর্টেই মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলো, আঞ্চলিক ব্লক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে জান্তার একের পর এক পরাজয় ও সীমান্ত হাতছাড়া হয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে।

জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার মতে, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলমান সংঘাতের কারণে ৩০ লাখের বেশি মানুষ তাদের ঘরবড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

এসএসি-এম এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ইয়াংহি লি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বাস্তবতা বুঝতে হবে। মিয়ানমারের জনগণের কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত