বিদ্রোহীদের হামলায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তিন তুন অং নিহত হয়েছেন।
দেশটির উত্তর শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওতে পাহাড় চূড়ার একটি ঘাঁটিতে রকেট হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তিনি মারা যান।
এই হামলায় শান রাজ্যের পুলিশ প্রধান কর্নেল হ্লা মিনও নিহত হয়েছেন।
শান রাজ্যের হান ভাষা-ভাষী কোকাং জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনালিটিজ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এই হামলা করে। গত ৩ জুলাই থেকে তারা শান রাজ্যে ফের যুদ্ধ শুরু করেছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুন অং এবং তার সৈন্যরা ২৩ ও ২৪ জুলাই পিছু হটে প্রথমে লাশিও সিটি হলে অবস্থান নেয়। এরপর ২৫ জুলাই একটি পাহাড় চূড়ার ঘাঁটিতে গিয়ে উঠে।
এই খবর পেয়ে ৩০ মিনেটের মধ্যেই এমএনডিএএ সেই পাহাড়ের চূড়ায় রকেট হামলা চালায়।
হামলায় শান রাজ্য পুলিশ বাহিনীর প্রধান কর্নেল হ্লা মিন নিহত হন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুন অং গুরুতর আহত হয়ে পরে মারা যান।
এমএনডিএএ ও তাদের মিত্রবাহনী ২৭ জুলাই পাহাড় চূড়ার ঘাঁটিটি দখল করে নেয়।
এমএনডিএএ হল ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য, যেটি গত বছরের ২৭ অক্টোবর অপারেশন ১০২৭ শুরু করেছিল। এরপর মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত প্রায় পুরো শান রাজ্য দখল করে নিয়েছিল।
তবে জানুয়ারির শুরুর দিকে চীনের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ফলে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স যুদ্ধ বন্ধ করে এবং তাদের অগ্রগতি থেমে যায়।
গত ৩ জুলাই লাশিও শহর ও এর আশেপাশের জান্তা ঘাঁটিগুলোতে হামলার মাধ্যমে সেই অপারেশন পুনরায় শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জান্তার নর্থ ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর দখল করার পর এমএনডিএএ ও মিত্ররা লাশিওর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে। রাজধানী শহরটির অবশিষ্ট জান্তা ঘাঁটিগুলো দখলের জন্য এখনও লড়াই চলছে।
২৫ জুন থেকে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আরেক সদস্য তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) লাশিওর পশ্চিমে উত্তর শান রাজ্য এবং উত্তর মান্দালয় অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স সহ অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীও লড়ছে।
অপারেশন ১০২৭ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্রোহীদের জোট উত্তর শান রাজ্য এবং উত্তর মান্দালয় অঞ্চলে লাশিও সহ ছয়টি শহর ও নগর এবং বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর সহ প্রায় ১০০টি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে।
গত বছরের অক্টোবরের শেষদিকে অপারেশন ১০২৭ শুরুর পর মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নাটকীয় মোড় নেয়। বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ হামলার মুখে পতনের শঙ্কায় রয়েছে জেনারেল দেশটির জান্তা সরকার। ১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখলের পর দেশটির সেনা শাসকদের আর কখনও এমন নাজুক অবস্থায় পড়তে দেখা যায়নি।
তথ্যসূত্র : দ্য ইরাবতী