মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহীদের সশস্ত্র বাহিনী আরাকান আর্মি (এএ) জান্তা সরকারের আরেকটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর দখল করে নিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) বুধবার বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহরে জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৫২ এর সদর দপ্তরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
৩২ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর সোমবার তারা ব্যাটালিয়নটির সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সমুদ্র, আকাশ ও স্থল থেকে ভারী বোমাবর্ষণ করেও জান্তা আরাকান আর্মিকে পরাস্ত করতে পারেনি।
এএ বলেছে, সদর দপ্তরটির পতনের পর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে। অনেক জান্তা সেনা তাদের সহসেনাদের মৃতদেহ রেখে পালিয়ে গেছে। কিছু জান্তা সেনা আত্মসমর্পণও করেছে। পলায়নরত সেনাদেরও তাড়া করেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের মংডু শহরে মিয়ানমার জান্তার কায়েইন চাউং ফাঁড়ি দখলের প্রচেষ্টাও ত্বরান্বিত করেছে। এএ যোদ্ধারা প্রায় এক মাস আগে ওই সীমান্ত চৌকিতে আক্রমণ শুরু করে এবং এর কিছু অংশ দখল করে নেয়।
সোমবার তাহমান থার পুলিশ ফাঁড়িতে জান্তা সরকারের পুলিশ বাহিনীর প্রায় ১০০ সদস্য আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করে। ফাঁড়িটিতে এএ যোদ্ধারা টানা আক্রমণ চালিয়ে জান্তা বাহিনীকে পরাস্ত করে।
ফাঁড়িটি থেকেও প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করার কথা জানিয়েছে আরাকান আর্মি। এএ বুথিডং ও মংডু শহরের অবশিষ্ট জান্তা ঘাঁটিগুলোতেও আক্রমণ করছে।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর রাখাইনে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার মাসে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যজুড়ে জান্তার বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ও সামরিক কমান্ড সেন্টারসহ প্রায় ১৭০টি জান্তা ফাঁড়ি ও ঘাঁটি দখল করেছে। এ ছাড়া প্রতিবেশি চিন রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর পালেতোয়াসহ রাখাইনের ৮টি শহর দখল করে নিয়েছে।
এএ তাদের হাতে বন্দি হাজার হাজার জান্তা সেনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ করছে।
গত চারদিনে মিয়ানমারজুড়ে ৩টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরসহ বহু ঘাঁটি দখল
সম্প্রতি গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত বিদ্রোহীদের সশস্ত্র বাহিনীগুলো (ইএও) মিয়ানমারজুড়ে জান্তা সরকারের লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা বাড়িয়েছে। গত চারদিনে বিদ্রোহীদের জোট বিভিন্ন রাজ্যে জান্তা সরকারের ৩টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরসহ বহু ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া জান্তা বাহিনীর অন্তত ৩০ জন সেনা নিহত হয়েছে। রাখাইনসহ কাচিন ও কারেন রাজ্য এবং সাগাইং ও মান্দালয় অঞ্চলেও বিদ্রোহীরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।
কাচিনে জান্তার দুটি ব্যাটালিয়ন দপ্তর ও দুটি ঘাঁটি দখল কেআইএর
কাচিন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহীদের সশস্ত্র বাহিনী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) মঙ্গলবার রাজ্যে জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৩২০ ও ৩৮৭ এর সদর দপ্তর দখল করেছে। সেইসঙ্গে কাচিন রাজ্যের মোমাউক শহরের দুটি সামরিক ফাঁড়িও দখল করে নিয়েছে।
জান্তা বাহিনীর কিছু সেনাও কেআইএর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এ ছাড়া বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদও জব্দ করার কথা বলেছে কেআইএ।
কারেন রাজ্যের কাওকারেকে বিদ্রোহীদের যৌথ আক্রমণ
সোমবার কারেন রাজ্যের কাউকারেইক শহরের কাউত বেইন পুলিশ ফাঁড়িতে পিডিএফ, মোন জাতিগত বিদ্রোহীদের সশস্ত্রবাহিনী ও কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (কেএনএলএ) যৌথ আক্রমণে জান্তার পাঁচ সেনা নিহত হয়। বাকী ৩৩ সেনা সাদা পতাকা উত্তোলন করে আত্মসমর্পণ করে।
এতে কয়েকজন বিদ্রোহী সেনাও আহত হন। বিদ্রোহীরা অনেক অস্ত্র ও কিছু গোলাবারুদও জব্দ করে। ওই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে জান্তা গ্রামে বিমান হামলা চালালে একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
একই দিনে বিদ্রোহীদের জোটের দুটি কলাম কাওকারেক শহরে একটি পুলিশ ফাঁড়িসহ তিনটি জান্তা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে ১৫ জান্তা সেনা নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়। হামলার সমন্বয়কারী অ্যালবিনো টাইগার কলাম জানিয়েছে, সংঘর্ষে চার বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে।
মান্দালয়ে মাইন অ্যামবুশে ১১ জান্তা সেনা নিহত
মান্দালয়ের নাগাজুন শহরের পিডিএফ দাবি করেছে, তারা অন্তত ১১ জন জান্তা সেনাকে হত্যা করেছে। পিডিএফসহ অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর জোট শনিবার ও সোমবার মান্দালয় অঞ্চলের নাগাজুন শহরের একটি গ্রামের কাছে একটি সামরিক ইউনিটের বিরুদ্ধে স্থল মাইন ব্যবহার করে তিনটি অতর্কিত হামলা চালায়।
এতে আহতও হয়েছে অনেক জান্তা সেনা। অতর্কিত হামলার পর, জান্তা সেনারাও পাল্টা গুলি করে জবাব দেয়। তবে এতে বিদ্রোহীদের কেউ হতাহত হয়নি।
সাগাইং-এ জান্তা সমর্থক মিলিশিয়াদের ওপর ড্রোন দিয়ে বোমাবর্ষণ বিদ্রোহীদের
সোমবার সাগাইং অঞ্চলের আটটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট শ্বেবো শহরে পান ইয়ান গ্রামে জান্তা সমর্থক মিলিশিয়াদের ওপর রিমোট-নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে বোমা বর্ষণ করে। এতে জান্তাপন্থী পিউ সো টি মিলিশিয়া বাহিনীর দুই সেনা আহত হয়েছেন। ওই যৌথ হামলায় যোগ দেওয়া বিদ্রোহী সংগঠন শ্বেবো ক্রোকোডাইল গ্রুপ এই তথ্য দিয়েছে।
একটি বৈঠক করার সময় জান্তা বাহিনী সমর্থক মিলিশিয়া বাহিনীর ওপর চারটি বোমা আঘাত হানে। বিদ্রোহীদের হামলার পর প্যান ইয়ান ও পাশের থি লোন গ্রামের জান্তা বাহিনী ও জান্তা-পন্থী মিলিশিয়ারা নির্বিচারে গুলি চালায়। তবে এতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের কেউ হতাহত হয়নি।
তথ্যসূত্র: দ্য ইরাবতী