বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোনে ওপার থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বার্তা আসার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এসব বার্তা পাঠাচ্ছে বলে এপারে থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের মধ্যে সীমান্তের ওপারে রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই চললেও এবার বেকায়দায় আছে দেশটির সরকারি বাহিনী।
জাতিগত নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা। তাদের বেশিরভাগই আছেন কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে।
২০১৭ সালে রাখাইন প্রদেশে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের পর যে দমন অভিযান চলে, তাতে সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে রাখলেও পরে খুলে দিলে একবারেই চলে আসে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার ৩৩টি ক্যাম্পে বর্তমানে আছেন ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা অনেকের মোবাইল ফোনে অডিও, ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এমন কিছু বার্তা এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। একটি ভিডিওবার্তায় দেখা গেছে, মিয়ানমারে বিজিপির এক ফাঁড়িতে কিছু অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে একজন নিজেকে আরএসও যোদ্ধা দাবি করে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখন আমাদের দখলে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা ভাই-বোনরা দেশে ফিরে আসেন। এখানে এসে নিজ নিজ গ্রামে ঘর করে বসবাস করেন।”
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্লকের কমিউনিটি নেতা আবদুল গফুর জানিয়েছেন, এমন অডিও-ভিডিও বার্তা অসংখ্য রোহিঙ্গার মোবাইলে এসেছে। যেখানে আরকান আর্মির পক্ষেও রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আরকান আর্মির পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্ব-স্ব গ্রাম-ঘর তৈরিতে সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম নামের বালুখালী ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকে ইতোমধ্যে মিয়ানমার ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার এজন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি এতদিনেও। রোহিঙ্গারাও নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকে নিজ দেশে ফেরায় অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছিল।
মিয়ানমার জান্তা সরকারের পক্ষে প্রত্যাবাসন নিয়ে যা করা হচ্ছে তা ‘নাটক’ বলে মনে করছেন বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আজমত উল্লাহ।
তিনি জানান, রাখাইন রাজ্য জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে। বিজিপি, সেনা সদস্যও প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে আসছে। আরকান আর্মি সব সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির অবস্থানে বিশ্বাসী হওয়ায় রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। রোহিঙ্গারাও ‘পজিটিভ’ চিন্তা করতে শুরু করেছেন।
বিশাল শরণার্থীর ভার দীর্ঘদিন বহন করে আসা বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের এখন বোঝা হিসেবে দেখছে। নিরাপত্তার জন্য তারা হুমকি হয়ে উঠছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
সেই সময়ে বিদ্রোহীদের এই আহ্বানকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যাওয়ার ‘চূড়ান্ত সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন কক্সবাজারের সামাজিক সংগঠন পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের উচিৎ মিয়ানমারের যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সেখানে ফেরত যাওয়া। এটা রোহিঙ্গাদের জন্য মঙ্গল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে বিভিন্ন বার্তায় ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানানোর বিষয়টি নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার বরাবরই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পক্ষে। এজন্য কাজও করছে সরকার।
ঘুমধুম থেকে বিজিপির ১০০ সদস্য টেকনাফে
বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির ১০০ সদস্যকে বৃহস্পতিবার বিকালে টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করছে বিজিবি। সেখানে বুধবার টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে আসা ৬৪ জন রয়েছেন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত ৩৩০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে ১০০ জনকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে।
২ রোহিঙ্গাকে ফেরত
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে দুই রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে ফেরত পাঠায়।
বিজিবি হোয়াইক্যং বিওপির কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ আবু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।