মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরাঞ্চলের আরও ১০টি সেনা ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যটির প্রায় পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে মিয়ানমার জান্তা।
এএ গত মাসে উত্তর মংডু দখল করার পর এ মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ মংডুতে জান্তার সামরিক ক্যাম্প এবং সীমান্ত রক্ষী পুলিশের (বিজিপি) অবস্থানগুলোতে হামলা শুরু করে। মে মাসের শেষ দিকে বুথিডং শহর দখলের পর মংডু শহরে বড় আকারে আক্রমণ শুরু করে তারা।
দুটি শহরই বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত। এলাকাটির বেশিরভাগ বাসিন্দা রোহিঙ্গা।
আরাকান আর্মি শুক্রবার এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তারা গত সপ্তাহে আরও চারটি জান্তা ক্যাম্প দখল করেছে। এগুলোর মধ্যে মাওয়াওয়াদ্দির কৌশলগত কমান্ড ঘাঁটি এবং খাউং টো ক্যাম্পও রয়েছে।
এসময় তারা মাওয়ায়াদ্দিতে জান্তার কৌশলগত কমান্ডার কর্নেল তাইজারসহ প্রায় ২০০ জান্তা সেনাকে হত্যা করে।
এছাড়া বুধবার দুপুরে হামলা চালিয়ে রাতের মধ্যে তারা মংডুর প্রবেশপথে অবস্থিত জান্তার গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্প আহ লেল থান কিয়াও দখল করে নেয়।
হামলার আগে ওই ক্যাম্পেও প্রায় ২০০ সেনা এবং বিজিপি সদস্য ছিল। হামলার পর তাদের অনেকেই পালিয়ে যায়।
আরাকান আর্মি বলেছে, তারা মংডুর পাশপাশি অ্যান এবং থান্ডে শহরেও জান্তার অবস্থানগুলোতে হামলা চালিয়ে যাবে। অ্যান রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে আর থান্ডে রাজ্যটির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
আরাকান আর্মি শুক্রবার আরও জানায়, তারা বহু জান্তা সেনাকে যুদ্ধবন্দী করেছে এবং আত্মসমর্পণ না করে পালিয়ে যাওয়া জান্তা সেনাদের সন্ধানও অব্যাহত রেখেছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মংডু থেকে অন্তত ২৮ জন পরাজিত জান্তা সেনা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
এর আগে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা ১৩০ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের গত রবিবার ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাজ্যটির ১৭টি শহরাঞ্চলের ৯টিই এখন তাদের দখলে।
গত বছরের নভেম্বরে তারা রাজ্যটিতে জান্তার অবস্থানগুলোতে হামলা শুরু করেছিল। প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহরাঞ্চলটিও তারা দখল করে নিয়েছে।
রাখাইন মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি রাজ্য। ৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজ্যটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত।
বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত রাজ্যটির পূর্ব সীমান্তে রয়েছে একটি পর্বতমালা, যা এটিকে মিয়ানমারের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
তথ্যসূত্র : দ্য ইরাবতী