ময়মনসিংহে ছয় দিনের ব্যবধানে খুন হয়েছেন তিন অটোরিকশাচালক। এসব ঘটনায় স্থানীয় চালকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গভীর রাতে অপরিচিত যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে সতর্ক হচ্ছেন তারা। পুলিশও তাদের সতর্ক করতে সচেতনতা সভা করে নানা ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে।
সবশেষ শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মুক্তাগাছার তারাটি ইউনিয়নের বিরাশী গ্রামের একটি পতিত জমি থেকে উদ্ধার করা হয় অটোরিকশা চালক শামীম মিয়ার (১৬) লাশ।
নিহত শামীম অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় দিনভর অটোরিকশা চালায় সে। পরদিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালিয়ে ফকিরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে প্রতিবেশী রাকিবুল ইসলামকে (২৩) গ্রেপ্তার করে।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন।
তিনি জানান, নিহত শামীমের একটি মোবাইল টেলিফোন কেনার শখ ছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী ভ্যানচালক রাকিবুলের সঙ্গে আলাপ করেছিল সে। দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে যে ভাড়ায় চালানো অটোরিকশাটি বিক্রি করে দুজনে টাকা ভাগ করে নেবে। রাকিবুলও একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের বিষয়ে চাপে ছিল। দুজনের পরিকল্পনায় জামালপুরের নরুন্দি এলাকায় গিয়ে এক ব্যক্তির কাছে ১০ হাজার টাকায় অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, “কথা ছিল, শামীমের অটোরিকশার মালিককে বোঝানো হবে যে অটোরিকশাটি হারিয়ে গেছে। বিক্রির পর নিহত শামীম মাত্র ২ হাজার টাকা দেয় রাকিবুলকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শামীমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে।”
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার বাগান এলাকার কলাবাগান থেকে রাকিব নামে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সদর ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার ছেলে। ভালুকা উপজেলার মেজরভিটা এলাকায় থেকে অটোরিকশার যাত্রী নিয়ে বের হয়ে খুন হয় সে।
তবে এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
একই রাতে সদর উপজেলার গোপালনগর মধ্যপাড়া এলাকায় যাত্রীবেশে অটোরিকশা চালককে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনতাই করার চেষ্টা করে একটি দল।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাজিম উদ্দিন (৪০) নামের অটোরিকশা চালককে ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ চালকরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ময়মনসিংহ নগরীর ইজিবাইক চলক হোসেন মিয়া বলেন, “আমরা এখন খুব সতর্কতার সঙ্গে চলছি। বিশেষ করে রাতে অটোরিকশা চলাচলে অপরিচিত লোকজনকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছি না।”
শহরের অধিকাংশ চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তারা সহজেই ছিনতাইকারী চক্রের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন জেলা সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম শাহীন। তিনি বলেন, “অটোরিকশা চালালেও এদের কোনও সংগঠন নেই। ফলে এদের কাউন্সিলিং করারও কেউ নেই। এ কারণে এ ধরনের ঘটনার শিকার তারাই বেশি হচ্ছে।”
এসব ঘটনা রোধে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি চালকদের সচেতন হতে আহ্বান জানালেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ।
পুলিশ বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন বলেন, সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন অটোরিকশা ও ভ্যান চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেন। নিরাপত্তার কথা চিন্তুা করে মহাসড়কে রাত ১২ টার পর কোনো অটোরিকশা চালাতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
রাত ১২ টার পর কোনো যাত্রী নিতে হলে তাকে চিনে রাখা, ছবি তুলে সেটা কাউকে পাঠিয়ে রাখলে কাউকে দিয়ে রাখলে এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলা করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।