ময়মনসিংহের সুতিয়া নদী থেকে এক যুবকের খণ্ডিত লাশ পাওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শুরুতে নিহত যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। পরে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হয়, নিহত যুবক ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তার নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৪)।
পারিবারিক বিরোধে সৌরভকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয় বলে পুলিশের ধারণা।
সদর উপজেলায় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মনতলা সেতুর নিচ থেকে রবিবার সকালে সৌরভের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান তুহিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মানুষের একটি মাথা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে আমি সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করি।
“মরদেহের মুখমণ্ডল দেখে বোঝা গেছে, সে এই এলাকার না। দূরে কোথাও থেকে হত্যা করে এখানে লাশ ফেলে গেছে হত্যাকারীরা।”
সাদিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, “লোকটিকে দেখতে শিক্ষিত ভদ্র মনে হচ্ছে। তাকে নির্মমভাবে মেরেছে। শরীর থেকে গলা পর্যন্ত মাথা, উরু থেকে দু’পা আলাদা করা হয়েছে।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ খাদে একটি লাগেজ থেকে মাথা ছাড়া লাশ এবং খানিকটা দূরে পলিথিনে মোড়ানো মাথা উদ্ধার করে। লাশের পাশে কাঁথা ও বালিশও ছিল।
এঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে এলাকাবাসী লাশের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছিল।
লাশ উদ্ধারের পর ময়মনসিংহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকির বলেছিলেন, যুবকটিকে হত্যার পর লাগেজে ভরে মাথা ছাড়া লাশ সেতুর ওপর থেকে পানিতে এবং পলিথিনে মোড়ানো মাথা পাট ক্ষেতের কাছে ফেলে যায় ঘাতকরা।
তিনি বলেন, “লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মেশিন দিয়ে গলা, পা কাটা হয়েছে। পরিচয় যাতে শনাক্ত করতে না পারি হত্যাকারীরা আলামত নষ্ট করেছে।”
বিকালে পুলিশ জানতে পারে, এটা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামের ইউসুফ আলী আকন্দের ছেলে সৌরভের লাশ।
নিহতের চাচা রতন আলী সাংবাদিকদের বলেন, সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী আকন্দ ডাক বিভাগে কর্মরত। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন সৌরভ। গত শনিবার রাতে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে এসেছিলেন।
সৌরভের বিয়ে সম্প্রতি পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছিল জানিয়ে রতন বলেন, “সৌরভ আমার ভাতিজি (আরেক ভাইয়ের মেয়ে) ইভাকে বিয়ে করে। সে বিয়ে মেনে নেয়নি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। পরে ইভাকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
“এসব নিয়ে আমাদের পারিবারিক কিছুটা বিভেদ চলছিল। তবে সেই বিভেদ সৌরভকে খুন করার মতো নয়। এখানে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে। আমরা চাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সৌরভ হত্যার রহস্য উদঘাটন হোক এবং দোষীরা শাস্তি পাক।”
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, “পারিবারিক বিরোধে সৌরভকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
সৌরভের চার খণ্ডিত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।