ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোট শনিবার। মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন, তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগেরই ঘরে। দলটির বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটুর। তিনি ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার বিপরীত গ্রুপে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেসামুল আলম ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু। তারাও প্রার্থী হওয়ায় ভোট ভাগ হবে তাদের মধ্যে। ফলে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন টিটু।
বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্যান্য মতাদর্শের কাউন্সিলর প্রার্থী রযেছে। ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে বলে আশা করছেন প্রার্থীরা।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান খান বলেন, “আমরা এখনও সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় রয়েছি। সে কারণে নিজেরা নিজেরা ভোটের বিষয় নিয়ে কিছু ভাবছি না। ভোটে সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ কম। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ নির্বাচনে জড়ালেও বেশিরভাগ নেতার ভোটে আগ্রহ নেই। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোট দিতে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ময়মনসিংহ সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (টেবিল ঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেসামুল আলম (ঘোড়া), জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টি যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন।
পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও আলোচনায় টিটু, এহতেসামুল ও টজু। ময়মনসিংহ নগরীতে রাজনৈতিকভাবে সাবেক সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু পরিবার এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত পরিবার বিভক্ত।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন টিটুর বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আমিনুল হক শামীম। সে থেকে নগরে দুই পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ বড় হয়েছে। যার প্রভাব সিটি নির্বাচনেও পড়ছে।
বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শান্তর পক্ষে মাঠে কাজ করেছিলেন এহতেসামুল ও টজু। টিটুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে টজুর পক্ষে এমপি শান্তর লোকজন কাজ করলেও এ গ্রুপের নেতাকর্মীরা এহতেসামুল ও টজুতে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। ফলে এমপি শান্ত গ্রুপের বিভক্তির কারণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সাবেক মেয়র টিটু এমনটি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত জাহান মুকুল বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নিজেদের মধ্যেই। সাবেক মেয়র টিটুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামা প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নতুন। তবে ভোটের মাঠে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় টিটু। দীর্ঘদিন নগরীর উন্নয়নে কাজ করায় সাধারণ মানুষও এবার টিটুতেই আস্থা রাখতে চাইছেন।
ইকরামুল হক টিটু বলেন, “আমি নগরবাসীর ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। আমি একজন প্রতিনিধি হিসেবে যেমন উন্নয়ন কাজ করেছি, তেমনি সব সময় নাগরিকবৃন্দের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সেই ভালোবাসা থেকে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারা আমাকে বিজয়ী করে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন।”
হাতি প্রতীকের প্রার্থী সাদেকুল হক মিল্কী টজু বলেন, “পিছিয়ে পড়া নগরীর উন্নয়নের জন্য মানুষ এবার হতি প্রতীকেই ভোট দেবে।”
অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেসামুল আলম বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। জনগণ ঐক্যব্ধ রয়েছে। সারাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ভাসলেও সাবেক মেয়র এই নগরের উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আগামীকাল শনিবার জনগণ ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।”
বাড়তি থাকবে ইভিএম
শনিবার সকাল ৮টায় নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোট কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। কেন্দ্রগুলোতে থাকবে ১৫০০টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। প্রায় ৫০০ ইভিএম অতিরিক্ত রাখা হবে।
যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে যেন ভোট বিলম্ব না হয়, সে কারণে বাড়তি ইভিএম রাখার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনও সংঘাতের আশঙ্কা দেখছি না। আচরণবিধির ক্ষেত্রে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থীদের বলা হয়েছে কেউ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা হারাতে পারে তারা। মেয়র, পুরুষ ও নারী কাউন্সিলর থাকায় প্রচারে ত্রিমুখী ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। সে কারণে ভোটার বাড়বে আশা করা হচ্ছে।
সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব
নগরীর ১২৮টি ভোট কেন্দ্রের অন্তত ৫০টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সব ভোট কেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার মিলে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া থাকবে মোবাইল টিম, স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিজিবি ও র্যাব।
শুক্রবার সকাল থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, সব কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দিয়েই নির্বাচনটি পরিচালনা করা হবে।
আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। ১৫৩৬ জনের আনসার, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১৭ টিম র্যাব কাজ করবে। সবার অংশ গ্রহণে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরহাদ আলম কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হবে। সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন।
২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফশিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে কেবল কাউন্সিলর পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।