Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ময়মনসিংহে ১৪ মামলায় আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার ১২২

mymensingh (2)
[publishpress_authors_box]

ময়মনসিংহে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে ১৪টি মামলা হয়েছে।

গত ১৮-২৩ জুলাই সদরসহ বিভিন্ন থানায় করা এসব মামলায় আসামি প্রায় চার হাজার। তাদের মধ্যে ১২২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪ জনকে।

পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ করেননি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ১৯ জুলাই বিকালে নগরীর আঠারোবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনির গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন গাড়িচালক মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

একইদিন বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের বাসায় হামলা ও ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন বাবুল।

এর আগের দিন ১৭ জুলাই বিকালে আনন্দ মোহন কলেজে কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

শুক্রবার বিকালে নগরীর চরপাড়া ও বাইপাস মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষে কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী রেদুয়ান হাসান সাগর (১৯) নিহত হন। তিনি নগরীর ভাংগাপুল এলাকার আসাদুজ্জামান আসাদের ছেলে।

পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ বক্স ভাঙচুরের অভিযোগে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতার নানা অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়েছে। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটি পিক-আপ ও তাল্লু স্পিনিং মিলের গোডাউন। করা হয় ভাঙচুরও। এসময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ ২০ জন আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন বিক্ষোভকারী মারা যান।

তারা হলেন- গৌরীপুরের কাউরাট গ্রামের আনার উদ্দিনের ছেলে জোবায়ের হোসেন (১৮), দামগাঁও গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো.বিপ্লব (১৮) এবং চুড়ালী গ্রামের হেকিম মুন্সীর ছেলে রাকিব হাসান (১৯)।

গৌরীপুর থানার ওসি (তদন্ত) আল ইমরান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার নানা অভিযোগে রোববার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০-৬০০ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেছে।

তিনি বলেন, “শুনেছি তিনজন বিক্ষোভকারী মারা গেছে। তবে এবিষয়ে থানায় কেউ কোনও অভিযোগ করেনি।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত শনিবার ফুলপুর বাসন্ট্যান্ড এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় কোটাবিরোধীদের। পুলিশ বক্সেও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম (৪২) নামে এক সবজি বিক্রেতা মারা যান। তিনি চর ডাকিয়া কান্দাপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতার নানা অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৫০০-৭০০ জনকে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ওসি মাহবুবুর আরও জানান, বিজিবির গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় করা মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হামলায় সাইফুল ইসলাম (৪২) নামে একজন পথচারী মারা গেছেন। এ বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শামীম হোসেন বলেন, নাশকতার নানা অভিযোগে এ পর্যন্ত জেলায় ১৪টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে প্রায় চার হাজার জনকে; তাদের বেশিরভাগ অজ্ঞাতপরিচয়। এর মধ্যে ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।

পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশেরও সমর্থন ছিল। কারণ এটা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি। এই আন্দোলনে নাশকতাকারীরা প্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়।

“এসব ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। ৭০-৮০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারা এসব ঘটিয়েছে তারা চিহ্নিত। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। সাধারণ মানুষের ভয়ের কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত