ছাত্রীকে মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, পড়া বোঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, মেসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও লিংক শেয়ার করার মতো নানা অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ এনে গতকাল ৩ মার্চ রবিবার এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন। এ খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষর্থীরা সোমবার দুই ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবন তালাও দিয়ে রাখেন। সাজন সাহার স্থায়ী বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা।
ছাত্রীর সঙ্গে জুনিয়র সহকর্মীর এমন কাজে প্রত্যক্ষ-পরক্ষোভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উপাচার্য জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ওই শিক্ষার্থী বলছেন, বিভাগীয় প্রধানকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালে তিনি একাধিক শর্ত। যার মধ্যে অন্যতম বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলতানার বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক’ তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।
গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে ওই শিক্ষার্থী পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, “২০১৯ সালে প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাজন সাহা স্যার আমাকে নানান ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথম দিকে ভালো মেসেজই দিতেন। তাই আমি বিষয়টাকে এড়িয়ে চলেছি।
“নানান সময়ে নানান কথায় একটু খটকা লাগলেও আমি ইগ্নর করেছি। ভেবেছি স্যার মনে হয় আমাকে স্নেহ করেন। এই কারণে মেসেজ দেন। এভাবে চলে আসে ২০২১ সাল। ২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখে রাত ১টা বেজে ৩৩ মিনিটে উনি আমাকে মেসেজ দেন, আসেন চা খাই।
“আমি উত্তরে বললাম স্যার অবশ্যই এনিটাইম, (ফরমালি), উনি রিপ্লাইয়ে বললেন, আমি যদি বলি এখনই? আমি উত্তরে বললাম- এখন তো পসিবল না স্যার। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। পরে উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন- না, এখন না।”
ওই শিক্ষার্থী বলছেন, সাজন সাহার এমন সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তার শিক্ষা জীবনে আসে বিপদ। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা, নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায়, আটকে যায় থিসিস পেপার। এমন নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাকে। তাই উপায় না পেয়ে মুখ খোলেন গতকাল রবিবার।
তার এ অভিযোগের খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘদীন ‘নীরবে নির্যাতনের শিকার’ অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেন। তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে পোস্ট করছেন অভিযোগ সংক্রান্ত স্ক্রিন শট।
সাজন সাহার বিচার দাবিতে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে তার স্থায়ী বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে তারা উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাদের অন্যা দাবির মধ্যে আছে- অপরাধে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবিলম্বে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা, ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোনও বিরূপ প্রভাব না পড়া নিশ্চিত করা।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাজন সাহার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার মোবাইলে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সাজন সাহার ‘অনৈতিক কাজে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার’ অভিযোগ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, “তাদের যে অভিযোগ তারা এটি বিভাগ বরাবর জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তবে সেটা তারা করেননি।
“তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, এ বিষয়ে কোনও তথ্য-প্রমাণ থাকলে আমিও জানতে চাই। অভিযোগ করলেই হবে না- এর সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলে-মেয়েরা এসেছে। আমি আগামীকাল ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”