ফোক ফিউশনের জনপ্রিয় কণ্ঠ নাদিয়া ডোরা। ফোক গানের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও ডোরা নানা ধরণের গান করেন। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত কিংবা লালনগীতি যেমন আছে রক, জ্যাজ, বলুজেও স্বচ্ছন্দ ডোরা।শ্রোতাদের কাছে সেসব গানের সমাহার নিয়েই প্রায় দশ বছর আগে ‘প্যানডোরা’ নামে একটি ব্যান্ড ফর্ম করেছিলেন ডোরা ও তার সঙ্গীরা।
২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে নিয়মিত পারফর্মও করেছিলেন তারা। টেলিভিশন কিংবা স্টেজ শো-তে।
‘মানব’ নামে একটি গানও প্রকাশিত হয়। তবে ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারিতে পৃথিবী থমকে যায়, তখন থমকে যায় প্যানডোরাও।
কেউ পড়াশোনার জন্য, কেউ বা ব্যক্তিগত কারণে ব্যান্ডে আর সময় দিতে পারেননি। তাই ডোরাও একা হয়ে পড়েন।
সলো ক্যারিয়ারে বেশ কিছু গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গীত পরিচালনায় ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ এ প্রকাশিত হয় “প্রাণ সখীরে”, “আমার অন্তরায় আমার কলিজায়”।
কৌশিক হোসেন তাপসের সঙ্গীত পরিচালনায় টিএম রেকর্ডসের “পীরিতির কারবার”, মুনের পরিচালনায় “লণ্ঠনে রূপের বাতি”, নাবিল হোসাইনের পরিচালনায় “পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না”, আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় “শ্যাম অঙ্গে রাই”-সহ বেশ কিছু গান।
গান করেছেন নাটক, সিনেমা আর ওটিটি প্লাটফর্ম প্রচার হওয়া কন্টেন্টেও। কাজল আরেফিন অমির ‘ভাইরাল গার্ল’ নাটকের “চোখের পট্টি”, অনম বিশ্বাসের ‘হোয়াট দ্যা ফ্রাই’-তে “কলিজা কি সিঙাড়া” গানটিও তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। এছাড়া রায়হান রাফির ওয়েব ফিল্ম ‘নিঃশ্বাস’-এ “সহজ মানুষ” গানটি বেশ প্রশংসিত হয়।
ব্যান্ড এবং সলো ক্যারিয়ার দু’টো নিয়েই একসাথে পথ চলছেন ডোরা।
“গান নিয়ে সবসময়ই বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যেই সময় কেটেছে সেটা এককভাবে হোক অথবা ব্যান্ড নিয়ে হোক। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সময়টাতে এই সময়টাতে আমি এককভাবে বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার-গীতিকার এবং শিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন গান এবং গানের প্রোগ্রামে কাজ করেছি।
“একক শিল্পী হিসেবে আমার পদচারণা সব সময়ই ছিল সেটা ব্যান্ড ফর্ম হওয়ার আগে থেকেই। তাই ব্যান্ড আর সলো হিসেবে কার্যক্রম সমানভাবেই সবসময় চলে আসছে,” সকাল সন্ধ্যাকে বলেন তিনি।
তবে থমকে যাওয়া ব্যান্ড ‘প্যানডোরা’-এর কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালে এসে আমরা আবার সবাই এক হয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যান্ডের কার্যক্রম আবার শুরু করার। খুব তাড়াতাড়ি নতুন ট্র্যাক রিলিজ করব, এইসব নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে ব্যান্ড।“
শুধু স্টুডিও নয়, মঞ্চেও ফিরছে প্যানডোরা। ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় যাত্রা বিরতিতে শো পারফর্ম করতে যাচ্ছে ব্যান্ডটি।
“যাত্রা বিরতি বরাবরের মতোই আমাদের খুব পছন্দের একটি জায়গা। আমাদের ব্যান্ডের শুরুর থেকে আমরা যাত্রা বিরতিতে নিয়মিত পারফর্ম করে আসছি। এই প্রোগ্রামটিতে মূলত আমরা আমাদের ভক্তদের পছন্দের গানগুলোই গাওয়ার চেষ্টা করি এর পাশাপাশি আমাদের যদি নতুন কোন আনরিলিস ট্র্যাক থাকে সেগুলো আমরা পারফর্ম করি। এবারও এর ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না” ডোরা বলেন।
এতো কাজের খবর। গানের মানুষ ডোরার মনের খবরটা একটু অন্যরকম। শুধু গানই যার উদ্দেশ্য নয়। ডোরার চাওয়া যে গানগুলো তিনি বাছাই করছেন গাইবার জন্য তা মানুষের মন বদলে দেয়ার জন্যই গাইছেন।
“আমি মানবধর্ম নিয়ে কাজ করছি। কোন বিশেষ ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণির জন্য নয়। সকল মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ যেন দূর হয়ে যায়, মানুষ যেন গান শুনে একটু হলেও মনকে ইতিবাচক করে তুলতে পারে সেটাই আমার চাওয়া। বাংলার শেকড়ের গানগুলো যেন বিশ্বের কাছেও পৌঁছে দিতে পারি, স্বপ্নটা তেমনই,” তিনি বলেন।
তবে শুধু লোকগান নয়, মৌলিক গানেও মন দিয়েছেন ডোরা। জানালেন আসছে জানুয়ারিতেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার তেমনই একটি গান।