Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

কাজ কী হবে, জানাল ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র কাজ কী হবে, তার একটি রূপরেখা এসেছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশের ছয় দিন পর নিজেদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনেিআসেন এই কমিটির নেতারা।

তারা বলেন, তারা কোনও রাজনৈতিক দল না হলেও তাদের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এই আন্দোলনে গণমানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে চায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন; লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এক আন্দোলন থেকে। এই পতনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থার পতন হিসাবে দেখে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নামে একটি সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দুজন সমন্বয়কও স্থান পেয়েছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঠিক এক মাস পর গত ৮ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারে এক সমাবেশ থেকে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের ঘোষণা আসে।

এরমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড ইউনূস জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ দেশ গড়তে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

‘সংহতি প্রতিরোধ পূর্নগঠন’ স্লোগান নিয়ে গঠিত নাগরিক কমিটি তার তিন দিন পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেদের উদ্দেশ্য সবিস্তারে তুলে ধরে।

সামান্তা শারমিন শুরুতেই বলেন, “আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নানান রকমের জিজ্ঞাসা রয়েছে আমাদের নিয়ে। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে এসব জিজ্ঞাসা পরিস্কার করতে চাই।”

এই আন্দোলন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে বলে মনে করে এই কমিটি। কমিটি মূলত সেই উদ্দেশ্যেই কাজ করবে।

সামান্তা বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দল নই। কিন্তু আমাদের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।

“আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেইসব আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের লক্ষ্যে নাগরিক কমিটি সক্রিয় থাকবে। এই নাগরিক কমিটির মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে একত্রিত করে ঘোষিত ৮ দফা বাস্তবায়ন করতে চাই।”

৮ দফা বাস্তবায়নে অচিরেই নাগরিক কমিটি সারা দেশে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে।

৮ দফা

১। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।

২। ছাত্র-জনতার উপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা।

৩। রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা।

৪। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।

৫। দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।

৬। জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।

৭। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি-নির্ধারণী প্রস্তাব তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপ গ্রহণ করা।

৮। গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।

সামান্তা বলেন, “আমাদের এই নাগরিক কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগণসহ সকল রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা। যেই ঐক্যের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা শোষণহীন, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব।”

দেশে ফ্যাসিবাদের বিলোপ এখনও হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ স্রেফ একটি সরকার নয়। এটি একটা ব্যবস্থা, যা বিভিন্ন আইন, প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক চর্চার মাধ্যমে টিকে থাকে। আমরা সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই।”

“ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরিতে কাজ করবে নাগরিক কমিটি। এমন একটি বন্দোবস্ত আমরা তৈরি করতে চাই, যাতে সামনের দিনে কোনও সরকার প্রধানকে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যেতে না হয়,” বলেন তিনি।

‘জাতীয় নাগরিক কমিটি তরুণদের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম’ উল্লেখ করে সামান্তা বলেন, “আমরা সামনের দিনের বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য তরুণসহ সকল নাগরিককে এই প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করতে চাই। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে জনগণকে আমরা সম্পৃক্ত করতে চাই।

“এরই মধ্যে সংস্কারের লক্ষ্যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে সরকার। আমরাও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত একত্রিত করে প্রস্তাবনা তুলে ধরব কমিশনের কাছে। আমরা চাই কমিশনগুলো তাদের কাজের সময় আন্দোলনরত সকল শক্তিকে সাথে নিয়ে এই কাজ করবে। যেন ঐক্যমত্যের মধ্য দিয়ে এসব সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।”

‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ তৈরিতে সবার অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে সামান্তা বলেন, “নতুন বন্দোবস্তের পথ আমরা সকল রাজনৈতিক পক্ষকে সাথে নিয়ে তৈরি করতে চাই। বন্দোবস্ত তৈরিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নেওয়ার কাজও করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।”

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্দিরে, মাজারে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানিয়ে এতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছে নাগরিক কমিটি।

সামান্তা বলেন, “এসব ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া মানুষ আশা করছিল, তা পূরণ করতে পারে নি সরকার। কেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে না, এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। যেকোনও ইস্যুতে সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর ও ধীরগতির।”

“সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে যদি তারা ধারণ করতে না পারে, তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর,” অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্কবার্তা দেন তিনি।

সরকারের সমালোচনা করে সামান্তা আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট পতনের ১ মাসের উপর সময় হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও শহীদদের নামের তালিকা সম্পূর্ণ করেনি সরকার। এ বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক আহত আছেন, যারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্রত্যেকদিনই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর আসছে। সরকারের অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।”

জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। একই সাথে এ বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকারও আহবান জানাচ্ছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত