ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার জন্মদিন ধরে একটি ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম; সেখানে লেখা তিনটি লাইনে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে করেছেন কটাক্ষ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মবার্ষিকী শনিবার। আওয়ামী লীগের শাসনকালে তার এই জন্মদিন ঘিরে দলের নানা আয়োজন থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার তা নেই।
সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে বন্দনাও নেই, যা আগে প্রতিবারই দেখা যেত।
এরমধ্যেই তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক একাউন্টে তিন বছর আগে শেখ হাসিনার জন্মদিনে দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজনের ছবি দিয়ে তিনটি লাইন লিখেছেন।
প্রথম লাইনে তিনি লিখেছেন- “যখন গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল..”
যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন নাহিদ অভ্যুত্থানের নায়ক হিসাবে বিবেচিত।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে নাহিদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা দেড় দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দাবি করে আসতেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন; যদিও নানা আইনের বেড়াজাল এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত করে রেখেছিল বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বার বার বলে আসত।
দৃশ্যত শেখ হাসিনার সেই কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ইঙ্গিত করে নাহিদ তার পোস্টে দ্বিতীয় লাইনে লিখেছেন-
“জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর স্বাধীনতা চাই..”
পরের লাইনে কটাক্ষ করে জুড়ে দিয়েছেন- “তথ্য উপদেষ্টার ফাঁসি চাই..”
২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে দেওয়া নাহিদের এই পোস্ট এক ঘণ্টায় শেয়ার হয়েছে ১১শ বার, তাতে মন্তব্য করেছেন ১৬শজন; প্রতিক্রিয়া এসেছে ২৩ হাজারটি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা বাবার দল আওয়ামী লীগের হাল ধরে আছেন চার দশক ধরে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত হন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে ১৯৯০ সালে পতন ঘটে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনের।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন তিনি।
তবে এই সময়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে ভোটাধিকার থেকে শুরু করে মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করে রাখার অভিযোগও আসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
গত জুলাই মাসে নাহিদদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কারের আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার কঠোর হাতে দমন করতে গেলে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
সেই আন্দোলনের তোড়ে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের; স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট তকমা নিয়ে তিনি পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই রয়েছেন। তবে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মধ্যে তিনি সেখানে রয়েছেন বলে তিনি কীভাবে জন্মদিন পালন করছেন, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য জানার সুযোগ ঘটছে না।
দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা কেউ বিদেশে পালিয়ে আছেন, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউবা দেশেই লুকিয়ে আছেন। ফলে তার জন্মদিন পালনে দলীয় কোনও কর্মসূচিও নেই।
তবে আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় শনিবার ভোরে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি পোস্টার শেয়ার করা হয়।
সেই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে-
“শুভ জন্মদিন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার,
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।”
সাত ঘণ্টায় এই পোস্টটি ১৬শ বার শেয়ার হয়েছে, প্রতিক্রিয়া এসেছে ৬১টি হাজারটি। আর এর মন্তব্যের ঘরে জমা পড়েছে ২০ হাজার জনের কথা।