নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এর বাইরে কোনও সেনাশাসিত সরকার তারা মেনে নেবেন না।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলে তিনি বলেছেন, তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর শূন্যতার মধ্যে এই দাবিগুলো জানানো হয়েছে।
তিন সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে।
এরপর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি রূপরেখা দেবে।
এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সংসদও বিলুপ্ত করা হবে।
তবে দেশে সরকারশূন্যতায় অরাজক এক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে সরকারি বিভিন্ন ভবনে লুটপাট শুরু হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়, দলটির নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়েরও উপরও আক্রমণ হয়।
এই পরিস্থিতিতে ভোররাতে এক ভিডিও বার্তা নিয়ে নাহিদসহ তিন সমন্বয়ক আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে।
নাহিদ বলেন, “আমাদের এই অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পরপরই দেশে অরাজকতা ও নাশকতা করছে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় গুলি হচ্ছে, বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হচ্ছে। আমরা মনে করি অভ্যূত্থানকে নস্যাৎ করতেই এই নাশকতার ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা সময়ের আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে নিজেদের প্রাথমিক রূপরেখা দেওয়ার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, “জরুরি পরিস্থিতি মোতাবেক এখনই তার একটি রূপরেখা ঘোষণা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সর্বজন গ্রহণযোগ্য, নোবেল পুরস্কারবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।”
ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, “তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করার স্বার্থে এই গুরু দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।”
সম্প্রতি আদালতের রায়ে দণ্ডিত ইউনূস দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। তাকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন সময়ে করা মন্তব্যের জন্যও সমালোচনা ছিল শেখ হাসিনার।
বাংলাদেশের সংবিধানে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোনও সুযোগ েনই। ফলে কোন প্রক্রিয়ায় এই সরকার হবে, তার স্পষ্ট ধারণা এখনও কোনও পর্যায় থেকে আসেনি।
এদিকে নাহিদ অতি দ্রুত ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, তাদের প্রস্তাবিত সরকারের সদস্যদের নাম তারা পরে ঘোষণা করবেন।
এই প্রস্তাবের বাইরে কোনও ধরনের সরকার মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, “কোনও সেনা শাসিত সরকার, সেনা সমর্থিত সরকার, ফ্যাসিস্টদের দোসরদের নিয়ে বি টিম সরকার, গণবিরোধী কোনও সরকার মেনে নেওয়া হবে না।
“ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা সরকার করতে হবে। সেই সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
অরাজক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত নিতে রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক।
তার আগ পর্যন্ত ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে অভ্যূত্থানকে ‘রক্ষা’ করার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে আরেকটি ভিডিও বার্তায় নাহিদসহ সমন্বয়করা সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে জোর দাবি জানান।
নাহিদ বলেন, “একটি অভ্যুত্থানের পরও ফ্যাসিস্ট হাসিনার জাতীয় সংসদ রয়ে গেছে। আজ বিকাল ৩টার মধ্যে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নইলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকব।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামগ্রিক রূপরেখা প্রস্তুত আছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, এটি শিগগিরই প্রকাশ করবেন তারা, অন্যান্য উপদেষ্টার নামও জানাবেন।