মুত্তিয়া মুরালিধরনের চোখ না শোয়েব আকতারের দৌড়, ব্যাটারদের জন্য কোনটা বেশি ভয়ঙ্কর। নব্বই থেকে বিংশ দশকে ভয়ঙ্কর বোলার প্রশ্নে এমন বিতর্ক হতো। এখন যেমন জাসপ্রিত বুমরাহকে নিয়ে ব্যাটারদের পা কেঁপে ওঠার চর্চা হয়। হয়তো খুব বেশি দেরি নেই যখন নাহিদ রানাকে নিয়েও ব্যাটারদের প্রতি এমন প্রশ্ন করা হবে।
এই সিরিজেই কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, কাভেম হজ বা জাস্টিন গ্রিভসদের এমন প্রশ্ন করা যেতে পারে। তাদের উত্তর শোনা রোমাঞ্চকর হবে।
বাংলাদেশ-উইন্ডিজ টেস্টের ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান বিশপ, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোসরা বসেছিলেন। যারা উইন্ডিজের পেস আক্রমণের সোনালী যুগের সর্বশেষ প্রজন্ম। তারাও মুগ্ধ ২২ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণে।
একজন রানার বোলিং রান আপ বিশ্লেষণ করছেন, অপরজন বোলিং অ্যাকশন। বিশপ তো বলেই দিলেন ২০২৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকান পিচে নাহিদ হবে বাংলাদেশের রত্ন।
এর কারণ নাহিদ এখন নির্ভার। কি করলে কি হবে, কি হতো, পারবো কিনা… এসব চিন্তা এখন তাকে প্রভাবিত করে না। উপভোগের মন্ত্র নিয়ে নাহিদ ছুটে আসছেন, বল ছুঁড়ছেন ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার গতিতে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গতিময় বোলারও হয়েছেন এই তরুণ।
নাহিদ রানার কোচ আলমগীর কবির বলেছেন নির্ভার নাহিদ এখন হয়ে উঠেছেন দুর্বার, “মানসিক ভাবে সে বেশ শান্ত ছিল। ম্যাচের আগে বা মাঝে একজন ক্রিকেটারের একটু উত্তেজনা কাজ করে। তাই অনেক সময় চাপে পড়ে যায়। তখন পারফরম ভালো হয় না। কিন্তু নাহিদকে এবার দেখলাম সে খুব নির্ভার ছিল, মানসিক ভাবে ফ্রি। যে ক ক্রিকেটারের জন্য এটা খুব প্রয়োজন।”
নাহিদ বাড়তি চিন্তা করছেন আলমগীর তা বুঝতে পারেন কিছুদিন আগেই, “পাকিস্তান-ভারত সিরিজের পর ওর সঙ্গে যখন কথা বলি, ও বলে যে – স্যার আমার মনে হয় আমি আরও জোরে বল করতে পারব। আমি জিগাস করলাম তাহলে কর, কোথায় আটকে যাচ্ছিস। তার উত্তর ছিল – কি জানি বলতে পারছি না। এই যে মানসিক চিন্তা বা চাপ, এই ব্যাপারটা ও কাটিয়ে উঠেছে এই উইন্ডিজ সফরে। এখন সে বুঝতে পেরেছে তার হারানোর কিছু নেই। নির্ভার হয়ে বল করছে।”
প্রথম টেস্টে নাহিদের না খেলাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আলমগীর। তার মতে ওই বিশ্রামটা দ্বিতীয় টেস্টে সর্বোচ্চটা দিতে সাহায্য করেছে নাহিদকে। তরুন পেসারকে এভাবেই বেছে খেলার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে এই বোলিং কোচ। এজন্য বিসিবিকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
নাহিদ এখন ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। সময়ের সঙ্গে তার গতি বাড়ার বিষয়টি নাহিদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আলমগীর। এ পেসারকে নিয়ে বেশি কিছু নয়, স্বাভাবিক কাজ করার পক্ষে তিনি, “নাহিদ পপিং ক্রিজে ল্যান্ডিংয়ের সময় একটু থেমে যায়। কোর্টনি ওয়ালশ বলছিল যে ও যদি ওখানে না থামে তাহলে পেস বাড়বে। কিন্তু আমি জানি এটা ওর স্টাইল। ওকে এটা থেকে সরিয়ে আনলে দেখা গেল ওর স্বাভাবিক বোলিংটা হারিয়ে যাবে। নাহিদ যেমন আছে তেমনই রাখা উচিত।”
নাহিদকে পূর্ণ স্বাধীণতা দিয়েছেন আলমগীর। এরপর নাহিদ নিজেই চাপ কাটিয়ে ওঠার পথ বের করেছেন। এখন পূর্ণ ছন্দে এই তরুণ। এই নির্ভার নাহিদকে বাংলাদেশও চায় বহুদিন।