Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

নাকবা থেকে নাকবা : ৭৬তম বছরে ফিলিস্তিনিদের জীবনে আরও বড় বিপর্যয়

গাজা প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে, যা পরিষ্কার করতে ১৪ বছর সময় লাগতে পারে। ছবি: রয়টার্স।
গাজা প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে, যা পরিষ্কার করতে ১৪ বছর সময় লাগতে পারে। ছবি: রয়টার্স।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ফিলিস্তিনিরা বলে, তাদের নাকবা বা মহাবিপর্যয় কখনোই শেষ হয়নি। নাকবা বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পথ পরিষ্কার করার জন্য ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো জাতিগত নির্মূল অভিযানকে।

ফিলিস্তিনিদের মতে, সেই জাতিগত নির্মূল অভিযান বা নিধনযজ্ঞ এখনও চলমান রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়ি, তাদের সম্প্রদায় এবং তাদের জমি থেকে বাস্তুচ্যুত এবং হত্যা করা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের ১৫ মে ছিল নাকবার ৭৫তম বার্ষিকী। তার কয়েকমাস পরই ফিলিস্তিনিদের ওপর নেমে আসে দ্বিতীয় নাকবা। ফের ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এই সময়ে বিস্ময়করভাবে বাড়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, আটক এবং বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা। যার বেশিরভাগই গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের সময় ঘটেছে।

গত বুধবার ১৫ মে ছিল নাকবার ৭৬তম বার্ষিকী। এর আগের এক বছরে ফিলিস্তিনিদের জীবন কতটা বিপর্যস্ত হয়েছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখেছে আল জাজিরা।

মৃত্যু

গত ৭ মাস ১০ দিনের সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা শুধু তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইইচএ) এর হিসাব মতে, ১৫ মে ২০২৩ এর আগের এক বছরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৩৪ জন এবং গাজায় ৮৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

অন্যদিকে, ১৫ মে ২০২৩ এর পরের এক বছরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৫৮৯ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১২৪ টিরও বেশি শিশু রয়েছে। আর গাজায় নিহত হয়েছে ৩৫ হাজার ১৭৩ জন, যার মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০টিরও বেশি শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।

বন্দিত্ব

দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠী আদদামির প্রিজনার সাপোর্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান, ১৫ মে, ২০২৩ এর আগের এক বছরে ৪৯০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিল। এদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার জনকে ‘প্রশাসনিক আটক’ নীতির অধীনে বন্দি করা হয়। ইসরায়েল এই নীতিটি তৈরি করেছে যাতে কোনও প্রমাণ, যথাযথ প্রক্রিয়া ও অভিযোগ ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যায়। সেই সময়ে ১৬০ জন শিশুও বন্দীও ছিল।

অন্যদিকে, ১৫ মে ২০২৩ এর পরের এক বছরে ৯৩০০ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ৩৪০০ জনকে প্রশাসনিক আটকে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৫০ জনই শিশু।

আল জাজিরা বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্যাতন, চিকিৎসায় অবহেলা, অনাহারে রাখা এবং যৌন সহিংসতার অগণিত সাক্ষ্য-প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি কারাগারের দেয়ালের মধ্যে ১৭টি মৃত্যুর ঘটনাও নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা থেকে বন্দীদের ওপর নিয়মিত শারিরীক নির্যাতনের ইঙ্গিত মেলে।

ধ্বংসযজ্ঞ

৭ অক্টোবর ২০২৩ এর আগে আন্তর্জাতিক নিন্দার ভয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ও ভবনগুলো ধ্বংসের কাজ ধীরে এগিয়েছিল।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, ১৫ মে ২০২৩ এর আগের এক বছরে সেখানে ১ হাজার ৪৬টি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে, ১৫ মে ২০২৩ এর পরের বছরে অতিরিক্ত ১ হাজার ২৭৪টি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়।

আইনি যুক্তি ব্যবহার করে অনুমতি ছাড়া নির্মিত বাড়িগুলো ধ্বংস করা সহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে। অথচ ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দাও ফিলিস্তিনি গ্রামগুলো ধ্বংস করা থেকে ইসরায়েলিদের বিরত করতে পারেনি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আক্রমণ চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের একের পর এক গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।

২০০৫ সালে ওসিএইচএ সেখানে হতাহতের রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে ২০২৩ সাল ছিল পশ্চিম তীরের সবচেয়ে সহিংস বছর।

৭ অক্টোবর থেকে গাজায়ও নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। অবরুদ্ধ গাজার ঘরবাড়িসহ প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভবন ও স্থাপনা ইসরায়েলের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

ওসিএইচএর হিসাব মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১২ মে পর্যন্ত গাজার ৬০ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৮০ শতাংশ বাণিজ্যিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া ৭৩ শতাংশ স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৮৩ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানির কূপ অকেজো হয়ে পড়েছে, ২৬৭টি মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১২টি আংশিকভাবে চালু আছে।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ৮০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম নাকবার সময় ৭-৮ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। আর এবার তার প্রায় তিনগুন মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার অনুমান, যুদ্ধের কারণে গাজা প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে, যা পরিষ্কার করতে ১৪ বছর সময় লাগতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত