সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে পড়া সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের একটি বাগান বাড়ি ক্রোক করেছে সরকার।
আদালতের আদেশে শনিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং দুদক রূপগঞ্জের পূর্বাচলের বাংলো বাড়ি সাভানা ইকো রিসোর্ট ক্রোক করে।
বাড়িটি সিলগালা করে এর ফটকে ক্রোক করার নোটিস ঝুলিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুর আলম এবং দুদকের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।
এর অর্থ হলো পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে লাল রঙের ডুপ্লেক্স বাড়িটি এখন সরকারের হেফাজতে থাকবে। ৬ কাঠার চারটি প্লট মিলিয়ে বাড়িটি বানানো হয়েছে।
বাড়িটির এক পাশে ডেমরা-ইছাপুরা (রূপগঞ্জ) সড়কের পাশে আনন্দ হাউজিং সোসাইটির কৃত্রিম লেক।
ক্রোক করার সময় উৎসুক জনতা বাড়িটির সামনে ভিড় জমান।
স্থানীয়রা জানায়, আট বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন বেনজীর। বছর চারেক আগে সেখানে বাড়িটি নির্মাণ করেন তিনি। মাঝে-মধ্যেই বিকাল ও রাতে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেখা যেত বেনজীরকে।
বেনজীর দুই বছর আইজিপির দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসরে যান। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও উঠে আসতে থাকে তার দুর্নীতির নানা তথ্য।
এরপর দুদকও তৎপর হয়। তাদের আবেদনে গত ২৩ ও ২৬ মে পৃথক আদেশে বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, তিন মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জাহরা জারিন বিনতে বেনজীরের নামে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটসহ ২০২টা দলিল, ২৭টি ব্যাংক একাউন্ট, ৯টি বিও একাউন্ড ও ৫টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকানা শেয়ার ক্রোক ও জব্দের নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগরের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
শনিবার বাড়িটি ক্রোক করার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আদালতের নির্দেশে মেনে ক্রোক করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন ও দুদুকের গঠিত কমিটি এই বাড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”
আগামী শনিবার পর্যন্ত বাড়িটি স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শফিকুর বলেন, সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে এই বাংলো বাড়িতে একটি দোতলা ভবন, কিছু কুকুর ও পাখি রয়েছে৷ এ রিসোর্ট দেখাশোনার জন্য যে দুজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন, তারা সোমবার পর্যন্ত এখানেই থাকবেন৷
তবে বাড়িটির ভেতরে ঢুকতে পারেননি জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, “ভবনটি ডিজিটাল লক সিস্টেমে বন্ধ আছে। এটি খুলতে উপযুক্ত টেকনেশিয়ান ও যন্ত্রপাতি না থাকায় আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি।”
দুদকের নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক মঈনুল হাসান বলেন, নারায়ণগঞ্জে বেনজীরের আর কোনও সম্পদ আছে কি না, তা অনুসন্ধান চালাবেন তারা।
দুদক সম্পদের খোঁজ-খবর শুরুর পর থেকে বেনজীর আর প্রকাশ্যে নেই। তিনি সপরিবারে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের জুন মাসের শুরুতে দুদক তলব করেছিল। তবে তারা হাজির হননি। তবে বেনজীর আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য পাঠান।
এরপর বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে।