Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

গ্যাসলাইন থেকে আগুন ধরে মানুষ মরে, দায়ীদের শাস্তি হয় না

গ্যাসের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জে বিধ্বস্ত ভবন। ফাইল ছবি
গ্যাসের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জে বিধ্বস্ত ভবন। ফাইল ছবি
Picture of বিল্লাল হোসাইন ,আঞ্চলিক প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ

বিল্লাল হোসাইন ,আঞ্চলিক প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ

[publishpress_authors_box]

ঘরের পাশেই ছিল তিতাসের পাইপলাইন। সেখান থেকে ছিদ্র দিয়ে গ্যাস যে বেরিয়ে আসছিল, তা টের পাওয়া যাচ্ছিল গন্ধে। বাড়ির মালিককে জানানো হলেও তাতে গা দেননি।

তারপর ঘরে গ্যাস জমে হলো বিস্ফোরণ। মারা গেলেন সুখী আক্তারসহ তার আরও দুই বোন। সেই ঘটনার সাক্ষী প্রতিবেশী ফরিদা আক্তার।

তিনি জানালেন, জ্বলন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে সুখী তার কাছে নবজাতক সন্তানটিকে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। এরপর হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন লাশ হয়ে।

ঘরে থেকে গ্যাসের আগুনে এভাবে গত চার বছরে নারায়ণগঞ্জে মারা গেছেন ১১৫ জন। বেশিরভাগ ঘটনায় তিতাসের পুরনো পাইপলাইনকে দায়ী করা হলেও তা মেরামতে কোনও উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। গ্রাহকের সচেতনতার কথা বলেই দায় সারছেন সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, সব শেষ চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁওয়ে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে আব্দুর রশিদ এক ব্যক্তি মারা যান। তার আগে ৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর কাশিপুরে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ক্রোনি এ্যাপারেলসে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ১৪ জন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের একটি বাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণে এক দম্পতির মৃত্যু হয়। তার আগে ২৬ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন সুখীসহ ৬ জন। তাদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে মারা যান।  

২০২৩ সালে নারায়ণগঞ্জে ১২৮টি গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনার মধ্যে ১১৮টি ঘটে তিতাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ২৭ জন।

তার আগের বছর ২০২২ সালের ১০৪টি গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তার মধ্যে তিতাসের লাইনের ত্রুটি থেকে বিস্ফোরণ হয় ৬৯টি। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান ১৮ জন।

২০২১ সালে ১১৪টি গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনার মধ্যে ৯৬টি ঘটে তিতাসের পাইপলাইন থেকে। ওই বছর আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ২০ জন মানুষ।

তার আগের বছর ২০২০ সালে ১০৬টি গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তার মধ্যে ৭১টি তিতাসের পাইপলাইনের ত্রুটি থেকে। তাতে দগ্ধ মৃত্যু হয় ৪৪ জনের। এর মধ্যে তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণেই প্রাণ হারান ৩৪ জন।

সব মিলিয়ে গত চার বছরে এ জেলায় গ্যাসের আগুনে নারী শিশুসহ অন্তত ১১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সবাইর তথ্য নেই ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশের কাছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

অভিযোগ তিতাসের দিকে

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ এর আশপাশে গ্যাস বিতরণের দায়িত্ব তিতাসের উপর। এই ধরনের ঘটনাগুলোর তদন্তে তিতাসের পাইপলাইনের ত্রুটিই পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বাহিনীর নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহামেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বেশিরভাগ ঘটনাতেই দেখা যায়, পাইপলাইনে লিকেজ থেকে রুমে গ্যাস জমাট বেঁধে দুর্ঘটনা ঘটে।

“রুমে গ্যাস জমাট বাঁধার পেছনের কারণ হলো, তিতাসের যে গ্যাস পাইপ রাইজার হয়ে বাসা বাড়ির দিকে সংযোগ যায়, সে সংযোগ পাইপের লিকেজ বা চুলার স্থলে নির্গত হওয়া।”

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসা বাড়িতে দরজা-জানালা বন্ধ অবস্থায় যখন গ্যাস জমে থাকে তখন লাইট-ফ্যান চালু করতে গেলে বা ম্যাচ দিয়ে রান্নার কাজ করতে গেলে তা স্পার্ক করে বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের এক তালিকায় দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে ১৩৫টি বহুতল ভবন, ৪২টি মার্কেট, ১৬৩টি মসজিদ ও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৭৮টি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ফলে দূর্ঘটনা ঘটলে হতাহতের আশঙ্কা থেকেই যায়। 

“তাই দুর্ঘটনা কমাতে সকল দপ্তরের সমন্বয় প্রয়োজন,” বলেন ফখরুদ্দিন।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকা ধরে নগরীর নিতাইগঞ্জ, দেওভোগ, আমলাপাড়া, খানপুর, চাষাড়া, জামতলাসহ অনন্ত ১৭টি এলাকায় কয়েকদিন ঘুরে দেখা যায়, ভবনের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো তিতাসের সংযোগ পাইপগুলো বেশ পুরনো। বেশিরভাগ পাইপে মরিচা ধরে আছে, টেপ মুড়িয়ে লিকেজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বহু পাইপে।

কোথাও কোথাও গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হলেও পাইপে গ্যাসের দেখা মিলেছে। তবে সে পাইপগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের ৮০ হাজারের বেশি আবাসিক গ্রাহকদের পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করছে। এছাড়া ৪২২টি কল-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করছে বিপণনকারী এই প্রতিষ্ঠান।

এখানে ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরনো পাইপলাইনে এখনও গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনার রশীদ।

পাইপে ত্রুটি নিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন দেখভাল করে ঢাকার আলাদা একটি বিভাগ। ফলে নতুন পাইপ স্থাপন তারাই দেখে। এখানে শুধু গ্রাহকরা পাইপের লিকেজের খবর দিলে তা মেরামত করে দেওয়া হয়।”

বাসা-বাড়িতে দূর্ঘটনার দায় গ্রাহকের দিয়ে মামুনার বলেন, “তিতাস শুধু দেখভাল করে বাইরের পাইপলাইন থেকে রাইজার পর্যন্ত। দুর্ঘটনা কমাতে হলে আগে স্থানীয়দের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।”

অগ্নিকাণ্ডের পর সুখী আক্তারের বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

কান্না থামছে না

রোববার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের বাগপাড়া এলাকায় সুখীর টিনশেডের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি ফাঁকা। সাংবাদিক এসেছে শুনে পাশের ঘর থেকে ছুটে আসেন ফরিদা।

সুখীর পরিবারের খবর জানতে চাইলে এই গৃহবধূ বলেন, “সুখী তো আর নেই, ২০ ফেব্রয়ারি রাতে মারা গেছে। তার স্বামী দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার মেয়ে মুনতাহা আমার কাছে ছিল। ওর কপালটাও আগুনে পুড়ে গেছে।”

সেই আগুন কতটা ভয়াবহ, তা নিজের চোখেই দেখেছেন ফরিদা।

তিনি বলেন, “ঘটনার তিন-চারদিন আগে থেকে ঘরে চারপাশে গ্যাসের গন্ধ বের হচ্ছিল। একথা বাড়ির মালিককে জানানো হয়। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। বরং বলেছিল, ছিদ্র বন্ধ করলে গন্ধ কমে যাবে। অথচ সেখান থেকে ঘরে গ্যাস জমে হলো বিস্ফোরণ।

“আফসোস, তিতাস পাইপ মেরামত করল বিস্ফোরণের পরের দিন।”

সেদিন আগুনে সুখী আক্তার (৩৩), তার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১০), বোন জান্নাতি আক্তার (১৮), ভাই আরিফ হাওলাদার (২১), ফুফাত বোন রহিমা আক্তার (৩২) এবং রহিমার মেয়ে রিতু (১৩) দগ্ধ হন৷

সুখীর স্বামী নূর মোহাম্মদ সিদ্ধিরগঞ্জের মুনলাইন নামের একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। তাই অনেক আগে থেকে বাঘপাড়া এলাকার কেতা মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তাদের বাড়ি বরিশালে।

মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নূর মোহাম্মদ জানান, গত ৯ জানুয়ারি সুখীর মেয়ে মুনতাহার জন্ম। তাকে দেখতে ২৫ জানুয়ারি বিকালে সুখীর ছোট বোন জান্নাতি ও তার ফুফাত বোন রহিমা তার বাড়িতে আসেন। রাতে গ্যাস বিস্ফোরণ হওয়ার সময় তারা সবাই ঘরে ছিল।

বিস্ফোরণে মারা যাওয়া রহিমা বেগমের মেয়ে রিতু চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। তার বাড়ি সুখীর ঘর থেকে আধা কিলোমিটার পূর্বে।

সেদিন কী ঘটেছিল- জানতে চাইলে রিতু সঙ্গে সঙ্গে কান্না শুরু করে। কিছুটা সামলে উঠে বলে, “সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে তখন ঘরে আমরা সবাই ছিলাম। তখন খালা (সুখী) মশার কয়েল জ্বালানোর সময় বিশাল শব্দ হয়ে আগুন ধরে যায়।”

“চার দিনের মাথায় মা (রহিমা) আর ছোট খালা (জান্নাতি) মারা যায়। পাঁচ দিন আগে সুখী খালাও মারা যায়,” বলার সময় রিতুর দু’চোখ গড়িয়ে আবার পানি ঝরতে থাকে।

রিতুর বাবা জানান, তারা কোনও মামলা বা অভিযোগ করেননি।

চার বছর আগে তল্লা মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত বাবার স্মৃতি মনে করে আজও কাঁদেন পারভিন আক্তার। প্রতিবন্ধী ভাই আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এখন কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। 

বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করে পারভীন বলেন, “যাদের কারণে মানুষগুলো মরলো, তারা তো ভালোই আছে। কষ্ট তো আমাদের।”

অগ্নিকাণ্ডের কয়েকটি মামলা বিচারাধীন নারায়ণগঞ্জের আদালতে।

মামলা হয়, তবে এগোয় না

গ্যাস বিস্ফোরণের পর মামলা হলেও তদন্ত বেশিদূর গড়ায় না। তাই এক্ষেত্রে যার গাফিলতি, তার শাস্তিও নিশ্চিত হয় না।

গত বছরে গ্যাস বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া প্রাণহানির ঘটনাগুলোতে অপমৃত্যুর মামলাও করে পুলিশ। তাছাড়া আদালতে বিচারধীন বেশ কিছু মামলা।

যে ধারায় মামলাগুলো হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। সঙ্গে জরিমানা বা অর্থদণ্ড রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হলে সাধারণত ৩০৪ (ক) ধারা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রাণহানির ঘটনাগুলোতে অপমৃত্যুর যে মামলা হয়, তার বেশিরভাগ ঘটনায় দায়ী শনাক্ত না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এসব মামলায় কারও সাজা হয়েছে কি না, সে তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে তল্লা মসজিদে বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা বিচারিক আদালতে চলমান বলে জানান আসাদুজ্জামান।

তল্লা মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির পরিদর্শক বাবুল মিয়া।

সেসময় তিনি বলেছিলেন, তিতাস গ্যাসের আটজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযুক্ত হওয়ায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

তবে গত কয়েক বছরে কয়েকবার চিঠি দিয়ে তিতাসের কাছ থেকে কোনও জবাব পাননি সিআইডি। ফলে এখনও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ সুপার নাসির উদ্দিন।

২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে নিহত হন ৩৪ জন। ফাইল ছবি

সুপারিশও উপেক্ষিত

তল্লা মসজিদে ৩৪ জন নিহতের ঘটনায় তিতাস গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

তাতে বলা হয়, গ্যাস সংযোগের অবৈধ পাইপলাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করায় লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস মসজিদে জমা হয়। এসময় বিদ্যুতের অবৈধ লাইন ব্যবহার করতে গিয়ে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদে আগুন ধরে প্রাণহানি ঘটে।

এতে গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ, বিদ্যুৎ সংযোগের স্পার্ক ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮টি সুপারিশ করেছিল তখনকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি।

সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরের বছরেই গ্রেপ্তার হওয়া আটজনই জামিনে মুক্ত হয়ে আবার স্বপদে বহাল হয়েছেন। তবে তাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়।

দুর্ঘটনা রোধে যে ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছিল, তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি তিতাস গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক ও ডিপিডিসি কেউই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেনি।

সরকারি প্রতিটি সংস্থাকে সুপারিশ বাস্তবায়নে একাধিবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের বর্তমান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী হীরা বাইন।

গ্যাস বিস্ফোরণে নিহতের স্বজনদের ভাষ্য, শীত কাল এলেই একের পর গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই তিতাস কর্তৃপক্ষ তৎপরতা চালায়। এছাড়া গ্যাসের পাইপলাইনে লিকেজের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তার সামাধান হয় না।

নারায়ণগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণের দুর্ঘটনা কমাতে তিতাস গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নারায়ণগঞ্জের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তিতাসের পুরনো অচল পাইপলাইন বদলের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অবহেলা বন্ধ করতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে যে ১৮টি সুপারিশ এসেছিলো তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, জেলা প্রশাসন, তিতাস, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও নাগরিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি তদারকি দল গঠন করা প্রয়োজন। যেখানে নিয়ম মানবে না বা আইনভঙ্গ করবে, সেখানে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হলে গ্যাস বিস্ফোরণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত