ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট নেই। দুটি মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করছে। তবে নির্ধারিত সময়ে বাস না আসা ও বাড়তি ভাড়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা।
শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কের বাস কাউন্টারগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কিছুটা কমে এসেছে। যাত্রীদের হয়রানি রোধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে পাঁচটি বাস কাউন্টারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়ক হয়ে ঈদযাত্রায় শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণ-উত্তর পূর্ব অঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। পাশাপাশি ঈদের পরও যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে ফিরে আসতে পারে সেজন্য যানবাহনগুলোর গতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাজ করবে পুলিশ।
মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে শিমরাইল, মদনপুর, মোগরাপাড়াসহ মেঘনা পর্যন্ত যানজট এড়াতে ইউর্টান, ইউলোবসহ আলাদা লেন নির্মাণ করায় আগে যেখানে যানজট হতো, এবার তা নেই। তবে মেঘনা টোল প্লাজায় শনিবারও যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা গেছে।
এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে স্ট্যান্ড ও চার লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের জন্য যাত্রামুড়া, বরাব, রূপসী, তারাব ও বরপা এলাকায় ধীর গতিতে যান চলাচল করতে হচ্ছে। এ সড়কটিতে শুক্রবার রাতে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ছিল।
তাছাড়া ঢাকা-মদনপুর বাইপাস (এশিয়ান হাইওয়ে) সড়কের নয়াপুর, বসতল, ভুলতা ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রূপগঞ্জের তারাব বিশ্বরোড পর্যন্ত যানবাহন চাপ দেখা গেছে।
গত কয়েক দিনের তুলনায় শনিবার সড়ক ও মহাসড়কের বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও কোথাও যানজট নেই বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক শরফুদ্দিন আহাম্মদ।
তিনি বলেন, দুটি মহাসড়কে হয়ে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার যানবাহনগুলোর গতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাজ করবে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। বিভিন্ন পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ার রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে রাজধানী ছাড়তে পারে সেজন্য যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
তবে শনিবারও নির্ধারিত সময়ে বাস না আসা ও বাড়তি ভাড়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা।
ভোগান্তিতে পড়া যাত্রী জুবায়ের আলম বলেন, “এদিকের রাস্তা ফাঁকা, তবে ঢাকা থেকে বাসগুলো ছেড়ে আসতে অনেক সময় লাগছে। ফলে ৯টার বাস বেলা ১১টাও এসে পৌঁছায়নি। বাস যখনি আসুক পরিবার নিয়ে ঈদ করতে নোয়াখালী বাড়িতে যেতে হবে।”
সিলেট পথের যাত্রী কুলসুম আক্তার বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) কারখানা ছুটি দিয়েছে, আজ বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু টিকেটের দাম বেশি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৫০ টাকা বেশি নিয়েছে।”
কিশোরগঞ্জের যাত্রী আকলিমা বেগম বলেন, “নিয়মিত ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অথচ আজ নিয়েছে ৪০০ টাকা। অভিযোগ করে কী হবে, ভাড়া তো বেশি নেবেই। প্রতি ঈদেই তারা ভাড়া বেশি নেয়।”
যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ ও বাড়তি ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ডে অবস্থিত দূরপাল্লার বাস কাউন্টার এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার আহসানুল আলমের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, “ঘরমুখো যাত্রীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হন, সেজন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আজকে (শনিবার) সাইনবোর্ড এলাকা যাত্রীদের সাথে কথা বলে ভোগান্তির বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে।
“বিভিন্ন যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। যেখানে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে, সেখানে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া যে বাস কাউন্টারে ভাড়া তালিকা ছিল না, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি বাস কাউন্টারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।”
এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান আহসানুল আলম।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশ দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক গাড়ি গেছে।
সড়কটি হয়ে ৬৩ হাজার ৫৫০টি যান মেঘনা টোল প্লাজার পার করে পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে গেছে বলে জানিয়েছে সড়ক জনপদে বিভাগের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাসা ফৈরদোস।
তিনি বলেন, বিগত ঈদগুলোতে সর্বোচ্চ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারি দিলেও এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবুও এ সড়কের কোথাও যানজট নেই। কারণ, ঈদের আগেই সড়ক জনপদ বিভাগ সব রকম প্রস্তুতি রেখেছে।