Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদের ছায়ায় কেন রকেট পাঠাবে নাসা

স্যাটেলাইট যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে  গবেষণার জন্য এই রকেট উৎক্ষেপণ।
স্যাটেলাইট যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে গবেষণার জন্য এই রকেট উৎক্ষেপণ।
[publishpress_authors_box]

বছরের প্রথম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হতে যাচ্ছে আগামী ৮ এপ্রিল। পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের যে কয়েকটি স্থান থেকে সূর্যগ্রহণটি বেশ পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, তার অন্যতম কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত। শুধু এবারের সূর্যগ্রহণই নয়, কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত আসলে যেকোনো সূর্যগ্রহণ দেখারই অন্যতম সেরা স্থান। ফলে সূর্যগ্রহণ হলেই আগ্রহীদের ভিড় জমে কানাডার দর্শনীয় এই স্থানটিতে।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৮ এপ্রিলের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য ইতোমধ্যে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ঘিরে আগ্রহীদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। নায়াগ্রার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে ১০ লাখের বেশি মানুষ নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সামনে জড়ো হতে পারেন বলে ধারণা করছেন তারা। তাই ভিড় সামলাতে সেখানে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।

বছরের প্রথম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা নিয়ে সাধারণ মানুষের এমন প্রস্তুতির মধ্যে বসে নেই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও। তারা সূর্যগ্রহণ ঘিরে তাদের গবেষণা কার্যক্রম চালানোর পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এর অংশ হিসেবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদের ছায়ায় তিনটি সাউন্ডিং রকেট নিক্ষেপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

সাউন্ডিং রকেট হলো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বহনকারী রকেট, যা গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ ও পরীক্ষার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা হয়।

সেদিন মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি রাজ্য ও কানাডার কিছু অংশে ১১৫ মাইল-প্রশস্ত এলাকাজুড়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। আর সমগ্র আমেরিকা মহাদেশ থেকে দেখা যাবে আংশিক সূর্যগ্রহণ। সূর্যগ্রহণের সময় হঠাৎ করেই সূর্যের আলো কমে যাবে।

গ্রহণের সময় সূর্যের আলো ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার কীভাবে প্রভাবিত হয় তা পরীক্ষা করার জন্যই রকেটগুলো পাঠানো হবে। আয়নোস্ফিয়ার হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তর যা বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসে ভরা।

রকেটগুলো ভার্জিনিয়ার ওয়ালপস দ্বীপে অবস্থিত নাসার রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে পাঠানো হবে। তিনটি রকেট একসঙ্গে উৎক্ষেপণ করা হবে না। ওয়ালপস দ্বীপ থেকে সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে, সেই মুহূর্তটি হবে ১৫:৩৩ মিনিটে (ইএসটি)। গ্রহণটি শুরু হবে ১৪:০৬ মিনিটে, আর শেষ হবে ১৬:৩৩ মিনিটে।

প্রথম রকেটটি সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে ছাড়া হবে, মাঝামাঝি সময়ে আরেকটি রকেট এবং গ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে তৃতীয় রকেটটি পাঠানো হবে। তিনটি রকেট আয়নোস্ফিয়ারের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে।

এই পরীক্ষার লক্ষ্য হল সূর্যগ্রহণের সময় আকস্মিকভাবে সূর্যালোক কমে যাওয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলে ঘটা পরিবর্তনগুলো পরীক্ষা করা।

মিশন প্রধান অধ্যাপক আরোহ বরজাতিয়া বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো সূর্য গ্রহণকালে চারটি ছোট বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, ঘনত্ব ও তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলো পরিমাপ করার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনগুলো বোঝা। রকেটগুলো আয়নোস্ফিয়ারে প্রবেশ করবে, যেখানে বাতাস বিদ্যুতায়িত হয়ে থাকে। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আয়ন ও ইলেকট্রন ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় ওঠা-নামা করে এবং ঘনত্বেও হ্রাস পায়। দ্রুত সূর্য গ্রহণের সময় আয়নোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে ঢেউ উঠতে দেখা যাবে।

আরোহ বরজাতিয়া ফ্লোরিডার এমব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। সেখানে তিনি মহাকাশ ও বায়ুমণ্ডলীয় যন্ত্রের ল্যাবও পরিচালনা করেন।

তিনি বলেন, “এটি একটি বিদ্যুতায়িত অঞ্চল যা রেডিও সংকেতগুলোকে প্রতিফলিত করে এবং সংকেতগুলোর প্রতিসরণও ঘটায়। সংকেতগুলো এর মধ্য দিয়ে চলাচলের সময় স্যাটেলাইট যোগাযোগও প্রভাবিত হয়।

“তাই আয়নোস্ফিয়ারকে বোঝা এবং রেডিও সংকেতে ব্যাঘাতের পূর্বাভাস দিতে সাহায্যের জন্য মডেল তৈরি আমাদের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ-নির্ভর বিশ্বের মসৃণভাবে চলা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।”

এই ধরনের পরীক্ষা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের ১৪ অক্টোবর একইভাবে তিনটি রকেট সূর্য গ্রহণের সময় আয়নোস্ফিয়ারে পাঠানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে রকেটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়। রকেটগুলো যথাক্রমে ২১৬ মাইল, ২১৯ মাইল ও ২১৮ মাইল উচ্চতায় পৌঁছেছিল। সেখানে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল।

সেসময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো সফলভাবে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এবারও সেগুলোকেই বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হবে। নিউ মেক্সিকো থেকে রকেটগুলো যেভাবে সূর্যগ্রহণের আগে, মাঝামাঝি সময়ে এবং শেষ হওয়ার আগে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবারও সেভাবেই উৎক্ষেপণ করা হবে।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস, নিউজ উইক ও জিও টিভি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত