সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। তার মৃত্যুর পর উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় এসেছিল হাশেম সাফিদ্দিন ও নাইম কাসেমের নাম।
এই দুজনের মধ্য থেকেই একজন হবেন হাসান নাসরাল্লাহর উত্তরসূরি, এমনটাই জানা গিয়েছিল।
তবে মঙ্গলবার ইসরায়েল দাবি করেছে, এই মাসের শুরুতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে তাদের এক বিমান হামলায় সাফিদ্দিন নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহ এখনও ইসরায়েলের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত ৪ অক্টোবর বৈরুতের বিমানবন্দরের পাশে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর হিজবুল্লাহ জানিয়েছিল সাফিদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা।
ইসরায়েল বলেছে, বৈরুতে সাফিদ্দিনের সঙ্গে আলী হুসেইন হাজিমাকেও হত্যা করা হয়েছে। আলী হুসেইন হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা কমান্ডার ছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানের হামলায় সাফিদ্দিন নিহত হয়েছেন। যে ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, সেটিতে হিজবুল্লাহর প্রধান আন্ডারগ্রাউন্ড ইন্টেলিজেন্স হেডকোয়ার্টার অবস্থিত। হামলার সময় প্রায় ২৫ জন জ্যেষ্ঠ হিজবুল্লাহ কমান্ডার ভবনটিতে উপস্থিত ছিলেন।
সাফিদ্দিনের হত্যার ঘোষণার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেল স্টাফের প্রধান হার্জি হালেভি বলেন, “আমরা নাসরাল্লাহ, তার উত্তরসূরি এবং হিজবুল্লাহর অধিকাংশ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গেছি। ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কারো কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হয় তা আমরা জানি।”
হাশেম সাফিদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান ও হাসান নাসরাল্লাহর আত্মীয় ছিলেন। তিনি হাসান নাসরাল্লাহর মামাতো ভাই।
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর তিনি ছিলেন প্রথম হিজবুল্লাহ নেতা যিনি জনসমক্ষে বক্তব্য রাখেন। ওই হামলার পরদিনই এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, আমাদের বন্দুক ও রকেট আপনাদের (হামাস) সঙ্গে আছে।
১৯৬৪ সালে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর টায়ারের কাছাকাছি দেইর কানুন এন-নাহর গ্রামে জন্মান সাফিদ্দিন। তিনি ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কোম শহরের দুটি প্রধান শিয়া ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে নাসরাল্লাহর সঙ্গে একত্রে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়ালেখা করেন। নাসরাল্লাহর মতো সাফিদ্দিনও শুরু থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত।
সাফিদ্দিন এমন একটি সম্মানিত শিয়া পরিবারের সদস্য, যে পরিবারের অনেকেই ধর্মীয় পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃত। এই পরিবার থেকে অনেকেই লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সাফিদ্দিনের ভাই আবদুল্লাহ ইরানে হিজবুল্লাহ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাফিদ্দিনের নিজেরও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার ছেলে রেধা বিয়ে করেছেন ইরানের শীর্ষ স্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মেয়েকে। কাসেম সোলাইমানি ২০২০ সালে ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হন।
হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদে নেতৃত্ব দেওয়া সাফিদ্দিন সংগঠনটির শূরা পরিষদেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এর জিহাদি পরিষদের প্রধান। এই ভূমিকা তাকে হিজবুল্লাহর বিদেশি প্রতিপক্ষদের শত্রুতে পরিণত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সাফিদ্দিনকে ২০১৭ সালে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ ঘোষণা দিয়ে তার সম্পদ জব্দ করে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন