Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

এক মিনিটও বিদ্যুৎ না যায়, সেই জায়গায় যাচ্ছি : প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফাইল ছবি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

রবিবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

নসরুল হামিদ বলেন, “সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কাজ করছে। এমন নিরবিচ্ছিন্ন, যাতে এক মিনিটও বিদ্যুৎ না যায়। সেই জায়গায় আমরা যাচ্ছি। এটাতে সময় দিতে হবে।”

এর আগে মুজিবুল হক চুন্নু তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকা করিমগঞ্জ উপজেলার (কিশোরগঞ্জ) কয়েকটি ইউনিয়নে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিং প্রতিদিন হচ্ছে। এখনও গরম আসে নাই। কুইক রেন্টালে-রেন্টালে গত ১০ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা জরিমানা দিয়েছেন। বসিয়ে বসিয়ে এখনও দিচ্ছেন। তাহলে বিদ্যুতের অভাব কেন? কেন লোডশেডিং?”

জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ওনার এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সকল সংসদ সদস্য এক বাক্যে স্বীকার করবেন, সারাদিন কোনও এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না— এটা ঠিক না।”

এ সময় মুজিবুল হক চুন্নুকে দাঁড়িয়ে দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায়। তবে মাইক বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য শোনা যায়নি।

তখন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “হয়তো বা তার বাড়িতে থাকেনি দুই-একঘণ্টা। অথবা হতে পারে তার ইউনিয়নে কোনও একটা ট্রান্সফরমারে কোনও একটা সমস্যা হয়েছে, অথবা ট্রান্সমিশন লাইন চলে গেছে। সেটা মেরামত করতে সময় লেগেছে।”

নসরুল হামিদ বলেন, “সারাদেশে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না— এটা স্বপ্নে এখন দেখা যেতে পারে। কয়েক ঘণ্টা হয়তো থাকতে পারে। উনি (চুন্নু) হয়তো বলতে গিয়ে সারাদিন বলে ফেলেছেন। কয়েক ঘণ্টার বিষয়।”

তিনি বলেন, “আমরা এখন কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে জরিমানা দিচ্ছি না। তবে কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ না নিলে তাকে অবশ্যই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এখন আর কুইক রেন্টাল নেই। ডিজেলের এক হাজার মেগাওয়াট আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমরা যেটা ব্যবহার করছি সেটা হলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র।”

গ্যাসের ঘাটতি এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের সঙ্গে দৈনিক প্রায় ৮০০-৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।

বিদ্যমান ঘাটতি এবং ভবিষ্যতে গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খনন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যার সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১০টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির সক্ষমতা সম্প্রতি দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের মোট সক্ষমতা দৈনিক ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, ভবিষ্যতে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আনকনভানশনাল রিসোর্স  থেকে গ্যাস উত্তোলন, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি আমদানি ও পাইপ লাইনে গ্যাস আমদানির বিষয়াদি বিবেচনা করে ২০৪০-৪১ অর্থবছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস উৎপাদন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০-৩১ অর্থবছরে দৈনিক ৪ হাজার ৬০৮ মিলিয়ন ঘনফুট ও ২০৪০-৪১ অর্থবছরে দৈনিক ৫ হাজার ২৪৯ ‍মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবারাহ করা যাবে বলে আশা করা যায়।

ভারত থেকে দৈনিক ২,৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে ২৩ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনের ‍বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

নতুন রিফাইনারি স্থাপনের পরিকল্পনা

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বর্তমান ইউনিটের দ্বিগুণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন ক্ষমতার একটি নতুন রিফাইনারি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৮-২৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে।

শিল্প এলাকায় গ্যাস নিরবচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া যাবে— সরকারের এমন আশ্বাসের কথা উল্লেখ করে নরসিংদী-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “আমরা গত সাত-আট মাস সেটা দিয়ে আসছি কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন  গ্যাস পাচ্ছি না। অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।”

এই প্রেক্ষাপটে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেবেন তা জানতে চান তিনি।

জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “উনি কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস পাচ্ছেন না সেটা জানালে ব্যবস্থা নেব। আমার মতে, আমরা চেষ্টা করছি অধিকাংশ শিল্প এলাকায় গ্যাস নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত