Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ‘বাংলার টেসলা’ বললেন নসরুল হামিদ

নসরুল
জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের সড়কে চলাচল করা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনও আইনি বৈধতা নেই। যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার যে পরিসংখ্যান দেয় সেখানে বড় অংশ থাকে এসব ব্যাটারিচালিত বাহনের।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরা এসব বাহন নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।

সবশেষ ২০২২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েস সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এক রায়ে বলে, ব্যাটারিচালিত ৩ চাকার যান মহাসড়কে উঠতে পারবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন সময় ব্যাটারিচালিত এসব রিকশাকে অবৈধ উল্লেখ করে তা বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

এমন অবস্থায় স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশাকে ‘বাংলার টেসলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এটিকে উৎসাহিত করার কথাও বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

শামীম ওসমান তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, “ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। রিকশার মধ্যেও ব্যাটারি লাগানো হচ্ছে। এগুলো খুবই বিপজ্জনক এবং চলাচল করাও নিষিদ্ধ। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অটোরিকশাগুলো বিদ্যুৎ চুরি করে চার্জ দেওয়া হয়। তারা আমাদের ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। এগুলো একযোগে সারাদেশে বন্ধের কোনও বিশেষ উদ্যোগ নেবেন কিনা, তা জানতে চাই।”

জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “কত দ্রুত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে ইলেকট্রিকে নিয়ে যাওয়া যায় তার জন্য সারা বিশ্বে এখন একটা বিপ্লব চলছে। তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনের দক্ষতার মাত্রা হলো ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ইলেকট্রিক যন্ত্রের দক্ষতার মাত্রা হলো ৮০ শতাংশ। মূলত আমরা উৎসাহিত করি বাজারে যত দ্রুত সম্ভব ইলেকট্রিক গাড়ি আসুক।”

তেলচালিত বাহনে কোনও দূরত্ব পাড়ি দিতে যদি ১০০ টাকা খরচ হয়, বিদ্যুচ্চালিত বাহনে সেই একই দূরত্ব যেতে ২০ টাকা খরচ হবে বলে এসময় জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ৪০ লাখের ওপর যানবাহন আছে। যারা লেড ব্যাটারি ব্যবহার করে। এগুলো চার্জ করতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এগুলো যদি লিথিয়াম ব্যাটারি হয়, তাহলে লাগবে মাত্র আধঘণ্টা।”

বিদ্যুত বিভাগ ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জের স্টেশন বসানোর নীতিমালা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ নীতিমালার পর যে কেউ চাইলে চার্জ স্টেশন করতে পারবেন।”

নসরুল হামিদ বলেন, “এই ৪০ লাখ থ্রি-হুইলারকে আমি বলি বাংলার টেসলা। নিজ হাতে তৈরি করা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছেন। আমরা তাদের কোনও বাধা দিচ্ছি না। যান্ত্রিকভাবে এতে ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ যেটা ব্যবহার করছে তার রিটার্ন অনেক বেশি।

“এই ৪০ লাখ রিকশাচালক যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তারা অবশ্যই আয় করছেন। এক্ষেত্রে তারা যেন লেড ব্যাটারি ব্যবহার না করে লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে তা নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প করছি। আমরা লেড ব্যাটারি নিয়ে তাদের লিথিয়াম ব্যাটারি দেবো।”

বাংলাদেশের গণপরিবহন হিসেবে চলাচল করা বাসগুলোকে দ্রুত বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এতে খরচ কম, এগুলো পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টর ১৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়টি উদ্বেগের। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত। কোথাও অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় কিনা সে বিষয়ে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নজরে রাখছে। বেশিরভাগই এখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ না নিয়ে মিটারের মাধ্যমে নিচ্ছে।”

আরেক সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। আর গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট (৪৩ শতাংশ), ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ছয় হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট (২৪ শতাংশ), ডিজেলভিত্তিক ৮২৬ মেগাওয়াট (৩ শতাংশ), কয়লাভিত্তিক চার হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট (১৭ শতাংশ), হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট (এক শতাংশ), অনগ্রিড সৌর বিদ্যুৎ ৪৫৯ মেগাওয়াট (দুই শতাংশ), বিদ্যুৎ আমদানি দুই ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট (১০ শতাংশ)।”

চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছর শীতকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে।”

আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত