Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জ্বালানি অপরাধীদের বিচার দাবি

শনিবার তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির  গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শনিবার তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
[publishpress_authors_box]

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে দায়মুক্তির আইন বাতিল করে এসব খাতের সব পর্যায়ে যারা দুর্নীতি ও লুণ্ঠন করেছে, তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি উঠেছে।

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি তুলে ধরে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে দাবি আদায়ে আগামী ৬ নভেম্বর সারাদেশে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির ঢাকা মহানগরীর অন্যতম সমন্বয়কারী জুলফিকার আলী।

বৈঠকে কমিটির সাবেক সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “দায়মুক্তি আইন তৈরির সময়ই বোঝা গেছে, ভয়ংকর কিছু ঘটবে। ২০১৫ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকেও দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একই কোম্পানি ভারতে ৫০০ কোটি ডলার ও বাংলাদেশে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার খরচ করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। এখানে অনেক গোপন খরচ আছে।

“গত সরকারের সময় এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনা ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তির সময় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস উপস্থিত ছিলেন। এখন ওই কোম্পানির উপদেষ্টা হয়ে পিটার হাস বাংলাদেশে ঘুরছেন নতুন করে কাজ পেতে। দেশের সম্পদের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

‘ব্যক্তির বদল করে ব্যবস্থা না বদলালে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে; তাই ব্যবস্থা বদলের রাজনীতি করতে হবে’ বলেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, “কোন জায়গায় সংস্কার করলে ব্যবস্থা বদল হবে, সেটা বুঝতে হবে সরকারের।

‘দায়মুক্তি’আইনের অধীনে যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে উল্লেখ করে আকাশ বলেন, “মানুষের মূল দাবি, সস্তায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ। গণশুনানির মাধ্যমে এসবের দাম নির্ধারণ করতে হবে।”

বিদ্যুৎ খাতে দ্রুত ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ আছে বলে জানান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম।

তিনি বলেন, “৪০টি ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র বাতিল ও ৮টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্র ভাড়া ডলারের বদলে টাকায় হিসাব করে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো যায় ২৪ ঘণ্টায়। সরকারকে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।”

বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বিদ্যুৎ–সচিব আহমদ কায়কাউস, আবুল কালাম আজাদ ও মনোয়ার হোসেনরা জ্বালানি অপরাধী বলে অভিযোগ করে তাদের বিচার চান ক্যাবের উপদেষ্টা এম শামসুল আলম।  

আগের সরকারকে মুমূর্ষু অবস্থায় আইএমএফ ঋণ দিয়েছে, বর্তমান সরকার সেই ঋণের দায় পরিশোধে অস্বীকৃতি জানাতে পারে বলে উল্লেখ করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিস চৌধুরী।

তিনি বলেন, “এমন ঘটনা ইকুয়েডরে আছে। এ সরকারও নতুন করে সংস্কারের জন্য আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে। তার আগে সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। না হলে ঋণ কাজে আসবে না।”

বৈঠকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা।

আগের সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মোশাহিদা বলেন, গত ১৫ বছরে বেসরকারি খাতকে উৎসাহী করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে টাকা দেওয়া, এলএনজি আমদানি, বিদ্যুতের দাম ১৪ বার বাড়ানো, উৎপাদন না করেও কেন্দ্র ভাড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঋণনির্ভর প্রকল্প নিয়েছে; এসব চালিয়ে যেতে জনস্বার্থবিরোধী আইন করেছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শুধু কয়লা আমদানির দামদর ঠিক করতে যে টাকা লুট হয়েছে সেটি ন্যায় সংগতভাবে করলে ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত, এখনও যায়। ফার্নিশ ওয়েল বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ন্যায় সঙ্গতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। আর পুরো বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার করতে পারলে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে।

বৈঠকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো হলো :

জাতীয় কমিটির ৬ দফা দাবির প্রতিটির মধ্যে আলাদা করে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া; বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অন্যায্য কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) প্রদানে ভর্তুকি বন্ধ করে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমাতে হবে; রূপপুর, মাতারবাড়ী, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল বা সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া; রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা; পল্লী বিদ্যুতের সংকট আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা; দেশীয় গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমদানিনির্ভরতা কমানো; সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি; নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র নিশ্চিত করা এবং সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত