রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর পর পেরিয়েছে তিনদিন। এখনও তার মরদেহ নাভালনির পরিবার বুঝে পায়নি ।
তাদের অভিযোগ, নাভালনিকে যে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই আলামত মুছতেই কালক্ষেপণ করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তা ফেরত দেওয়াই নিয়ম। তবে ক্রেমলিন বলছে ভিন্ন কথা। নাভালনির মরদেহের ‘রাসায়নিক পরীক্ষা’ করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে, এমনটাই বলছেন তারা। ফলে এখনই নাভালনির মরদেহ তার পরিবার পাচ্ছে না।
কেন নাভালনির মরদেহে রাসায়নিক পরীক্ষা চালানো হবে, এর কোন ব্যাখ্যা দেয়নি ক্রেমলিন।
বিবিসি বলছে, নাভালনির মরদেহ কোথায় আছে, তা তার পরিবারকে জানানো হচ্ছে না।
কারাবন্দি অবস্থায় মারা যাওয়ার একদিন পরও মরদেহ বুঝে না পেয়ে নাভালনির সহযোগীরা গত রবিবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছে এবং আলামত গায়েবের চেষ্টা চলছে।
উগ্রপন্থি সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও এতে অর্থায়ন, জালিয়াতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল নাভালনির। যদিও তিনি জীবিত অবস্থায় এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ শুক্রবার নাভালনির মা লিউডমিলা নাভালনায়াকে জানান, তার ছেলে কারাগারের ভেতর হাঁটাচলার সময় হঠাৎ পড়ে যান এবং জ্ঞান হারান। এরপরেই তার মৃত্যু হয়।
নাভালনির সহযোগী কিরা ইয়ারমিশ জানিয়েছিলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যন্ত কারাগারে ছুটে যান নাভালনায়া। সেখানে পৌঁছার পর তাকে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে লেখা ছিল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে নাভালনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নাভালনির আরেক সহযোগী ইভান এসদানোভ জানান, নাভালনির মাকে বলা হয়েছে, তার ছেলে ‘আকস্মিক মৃত্যু সিনড্রোমে’ মারা গেছেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই অস্পষ্ট পরিভাষা তখন ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কোনও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
রুশ রাজনীতিক নাভালনির মরদেহ হস্তান্তরে রুশ কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কড়া সমালোচনা করেছেন তার স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। স্বামীর মৃত্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ইউলিয়া সোমবার এক ভিডিওতে দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, নাভালনিকে নোভিচক বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ থেকে এই বিষের আলামত পুরোপুরি মুছে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই দুই সপ্তাহ সময় নিচ্ছে তারা।
ভিডিওতে নাভালনির অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইউলিয়া। স্বামীর মতো তিনিও ‘স্বাধীন রাশিয়ার’ দাবিতে লড়ে যাবেন। এই সংগ্রামে ইউলিয়া ভিডিওর দর্শকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যারা আমাদের ভবিষ্যৎ হত্যা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে, আমাদের ঘৃণা তাদের প্রাপ্য।”
নাভালনিকে নোভিচক বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে-তার পরিবারের এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে রুশ কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে হত্যায় এবার সফল হয়েছে বলা যায়। কারণ এই বিষ ২০২০ সালেও তার দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল। সে সময় বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।
ওই বছরের ২০ আগস্ট সাইবেরিয়া থেকে বিমানে করে মস্কো যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। রাশিয়ায় কিছুদিন চিকিৎসার পর তাকে জার্মানি নেওয়া হয়।
জার্মান চিকিৎসকরা সে সময় বলেছিলেন, নাভালনির দেহে নোভিচক বিষ পাওয়া গেছে।
জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল স্বয়ং এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন। রাশিয়া সরকারের কাছে এর জবাবদিহিতাও চেয়েছিলেন তিনি।