পাকিস্তানের লাহোরের রাস্তায় কদিন আগেই জ্যান্ত বাঘ-সিংহ নিয়ে মিছিল করেছিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সমর্থকরা। দলীয় পতাকায় থাকা বাঘকে তারা রাস্তায় নামিয়ে সেদিন নিজেদের নেতা নওয়াজ শরীফের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি জানান দিয়েছিল।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বন্দী ও তার দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) নির্বাচনে নেই। ফলে নিরুত্তাপ কিন্তু চাপা উত্তেজনাময় এক রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ইমরানহীন রাজনীতিতে পিএমএল-এনই ক্ষমতায় আসছে, আর নওয়াজই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, এমনটা ধরে নিয়েছেন অনেকেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তিনবার দেশটির শাসনক্ষমতায় ছিলেন। গত বছরই লন্ডনের নির্বাসিত অধ্যায় শেষ করে দেশে ফিরেছেন তিনি। এবারের ১৬তম জাতীয় নির্বাচনে তাকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলা হচ্ছে। দেশটির রাজনীতিতে তার আধিপত্য তিন দশকের বেশি। তারপরও, খুব কম সংখ্যক মানুষই তার ফিরে আসা ও নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।
শেষবার তার ক্ষমতা যায় দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে। এর আগেরবার সেনা অভ্যুত্থানের কারণে তাকে সরে যেতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত নওয়াজ শরীফের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, নওয়াজের জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু শুধু এ কারণেই তিনি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নন। তার চেয়েও বড় কথা, তিনি রাজনীতির ময়দানে সঠিক সময়ে সঠিক দান দিতে পেরেছেন।
নওয়াজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি সেনা সমর্থন ছিল। কিন্তু তিনি এখন কারাগারে বন্দী এবং তার দল নির্বাচন করতে পারছে না।
কেন আলোচনায় নওয়াজ শরীফ
নিঃসন্দেহে নওয়াজ ‘প্রত্যাবর্তনের রাজা’ (কিংস অব ক্যামব্যাকস)। অতীতেও তিনি এভাবেই ফিরে এসেছিলেন। ১৯৯৯ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদে সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি উচ্ছেদ হন। এরপর ২০১৩ সালে ফের নির্বাচনে ফিরে আসেন। শুধু তাই নয়, তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে রেকর্ডও করেন।
ওই ঘটনা পাকিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। কারণ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর সেবারই প্রথম দেশটিতে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার থেকে অন্য সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের ঘটনা ঘটে।
তবে নওয়াজ শরীফের তৃতীয় মেয়াদ ছিল নানা অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধীরা টানা ছয় মাস অবরোধ করে। তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষমেষ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এক পর্যায়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের একটি আদালত নওয়াজকে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে দুই মাস পর ইসলামাবাদের হাইকোর্ট এই রায় স্থগিত করে। পাশাপাশি আপিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
এরপরই নওয়াজ যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। গত অক্টোবরে দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত চার বছর তিনি সেখানেই ছিলেন। থেকে থেকে নির্বাসিত হলেও তিনি গত ৩৫ বছর ধরে দেশটির অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ।
জীবন বৃত্তান্ত
১৯৪৯ সালে লাহোরের এক বিখ্যাত শিল্পপতি পরিবারে নওয়াজ শরীফের জন্ম। তার বাবা মিয়া মোহাম্মদ শরীফ পাকিস্তানের বিখ্যাত ইত্তেফাক ও শরীফ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। বাবার সম্পদের ওপর ভিত্তি করেই নওয়াজ লাহোরের একটি আসন থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
জেনারেল জিয়াউল হকের সামরিক আইনের প্রথম দিকে তিনি জাতীয়ভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাব প্রদেশের অর্থমন্ত্রী এবং এরপর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পর্যবেক্ষকরা নাওয়াজকে একজন ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করেন না। কিন্তু তারা একইসঙ্গে স্বীকার করেন যে, তিনি দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। ১৯৯০ সালে নওয়াজ শরীফ প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তবে ১৯৯৩ সালে তাকে অপসারণ করা হয়। এতে তৎকালীন বিরোধী নেতা বেনজির ভুট্টোর সরকার গঠনের পথ সুগম হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় স্টিল কোম্পানি ইত্তেফাকের মালিক হিসেবে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ধনী শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম নওয়াজ শরীফ। জেনারেল জিয়াউল হক (১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮) ছিলেন নওয়াজের অন্যতম রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। ১৯৯৮ সালে নওয়াজই প্রথম পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেন। ফলে দেশের বাইরে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেন।
ক্যু
১৯৯৭ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে নওয়াজ শরীফ দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। সেনাবাহিনী ছাড়া দেশের সব প্রধান প্রতিষ্ঠানের ওপর তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তখন।
সংসদে বিরোধীদলের বাধার মুখে নওয়াজ শরীফ শরিয়াহ আইন বলবতের জন্য সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করেন। তিনি ক্ষমতাকেন্দ্রের অন্যদের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। তার সমর্থকদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুর চালায়। তিনি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফের হাতে নওয়াজ শরীফের উৎখাত, পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা বিপজ্জনক তা স্পষ্ট করে দেয়।
নওয়াজ শরীফ গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন। বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়। একই সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জীবদ্দশায় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হন। তবে সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি তাকে ও তার পরিবারের অন্যদের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এরপর নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের ৪০ জন সদস্যকে ১০ বছরের নির্বাসনে সৌদিতে পাঠানো হয়।
তখন বিবিসির ইসলামাবাদ প্রতিনিধি ছিলেন ওয়েন বেনেট জোন্স। পূর্বের ঘটনা স্মরণ করে তিনি জানান, নওয়াজ শরীফ ক্ষমতাচ্যুত হলে অনেক পাকিস্তানি স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। তারা তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য ও ক্ষমতালোভী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
দুর্নীতির অভিযোগ
নওয়াজ শরীফের প্রথম রাজনৈতিক নির্বাসন ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ফেরার পর নওয়াজ ধৈর্য ধরে বিরোধীদলের ভূমিকা নেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার দল সংসদের প্রায় এক চতুর্থাংশ আসন জেতে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে নওয়াজ শরীফ বিজয়ী হবেন ধারণা করা হলেও তার জয়ের ব্যাপকতা অনেককে অবাক করে। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাবে তিনি ইমরান খানের দলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ শরীফ পিটিআইয়ের ছয় মাসের অবরোধের মুখে পড়েন। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে পিটিআই নওয়াজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।
অভিযোগ আছে, পিটিআইয়ের ওই অবরোধের পেছনে ছিল দেশটির সেনা নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কিছু কর্মকর্তা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নওয়াজ শরীফ যাতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে না পারেন, সে উদ্দেশ্যেই তাকে চাপে রাখতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী।
তৃতীয় মেয়াদে নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানকে ‘এশীয় বাঘ’-এ পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল নতুন অবকাঠামো নির্মাণ ও দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্সের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এসময় অনেক সমস্যার মুখোমুখি হন নওয়াজ। অর্থনীতিতে একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল চীনা-অর্থায়নে নির্মিত ৫৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর। কিন্তু দেশের দুর্বল অর্থনীতির কারণে এই করিডোর সম্পূর্ণ হয়নি এবং এখনও কিছু প্রকল্প ঝুলে আছে।
২০১৬ সালে পানামা পেপার্স ফাঁসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ নতুন সমস্যায় পড়েন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত শুরু করে। তার পরিবারের লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে একটি অভিজাত এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছিল। সম্পত্তিগুলো কেনার অর্থের উৎস নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
২০১৮ সালের ৬ জুলাই পাকিস্তানের এক আদালত নওয়াজ শরীফকে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তার আনুপস্থিতিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ওই রায় ঘোষণার সময় তিনি লন্ডনে স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।
সুযোগের সদ্ব্যহার
প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খান যখন দেশ চালাচ্ছিলেন, তখন নওয়াজ শরীফ লন্ডনে। ইমরানও কিন্তু খুব একটা স্বস্তিত্বে ছিলেন না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছিল। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান ও তার পার্টির বিদায় হয়। এরই সুযোগ নেয় নওয়াজের ছোটভাই শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন।
ইমরানের পতনের পরই নওয়াজ ক্ষমতায় ফিরতে চেষ্টা করেন। বাড়িয়ে দেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ২০২৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ক্রমশ তার বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। এর সঙ্গে আগামী নির্বাচনে তার জয়ের পথও সুগম হয়।
তবে এর মানে এই নয় যে, পিএমএল-এনই জিতবে নিশ্চিত। নওয়াজ ও তার দলকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দায়ী করা হয়। তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ তার খ্যাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ড. ফারজানা শেখ বলেন, “নওয়াজ ছাড়া আগে কখনও কোনও দলই পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এবার তারা (পিএমএল-এন) জিতবে বলে মনে হচ্ছে। সবকিছুই ইঙ্গিত করে যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী বা বৃহত্তম দলের প্রধান হিসেবে আসবেন।”
কিন্তু তার কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেমন হতে পারে তা অনিশ্চিত বলেও মনে করেন তিনি।
নওয়াজ কি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন
পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থির ও উত্তেজনাপূর্ণ সময় চলছে। নওয়াজ শরীফ নিজেকে একজন অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যার তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল এবং সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তবে বিশ্লেষকরা এখনেও সাবধানী।
কুগেলম্যান বলেন, “নওয়াজ সমর্থকরা আশা করবেন স্থিতিশীলতা, অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে তার বক্তব্য তাকে ভোট পেতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক হবে। অন্তত তার পার্টির লোকদের জন্য তো ভালো হবে।”
নওয়াজের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- অর্থনৈতিক সংকট, যার জন্য তার দলকে দায়ী করা হয়। এছাড়া তার প্রধান প্রতিপক্ষ কারাগারে থাকায়, ভোট নিরপেক্ষ হবে না- এমন কথাও চালু আছে।
ড. শেখ বলেন, “নওয়াজ শরীফের সমস্যা হলো তার ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন তার দল ছিল পূর্ববর্তী জোট সরকারের প্রধান অংশীদার। সেই সরকারকে একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হয়েছিল, যা দেশের অর্থনীতিকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ও সঙ্কটের জন্য শরীফ ও তার দলকেই দায়ী করা হয়।”
এছাড়া পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বড় ভূমিকা আছে। বিদেশে থাকাকালীন নওয়াজ প্রায়ই সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে তিনি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আইএসআইয়ের একজন সাবেক প্রধান ও সেনাবাহিনীর সাবেক এক চিফ অফ স্টাফকে দায়ী করেছেন। যদিও তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থারও কট্টর সমালোচক। বিচারকদের পক্ষপাত বিচারের ফলে ‘মিথ্যা মামলার’ শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার। তিনি মনে করেন, এসব কারণেই পাকিস্তানের গণতন্ত্র ব্যাহত হয়েছে এবং কোনও প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।
সেনাবাহিনী কিন্তু কখনোই খোলাখুলি বলেনি যে তারা নওয়াজ শরীফ, ইমরান খান বা অন্য কোনও রাজনৈতিক নেতাকে পছন্দ করে। তারা রাজনীতিতে জড়িত হয় না, এমন কথা বহুবার বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজের প্রত্যাবর্তন ও ক্ষমতায় যেতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন নওয়াজ।
এ প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, “তিনি দেশে ফিরে এসে অনেক আইনি সুবিধা পেয়েছেন, তা প্রমাণ করে যে তিনি আবার প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর দয়া পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির বিচারব্যবস্থার ওপর অনেক প্রভাব রয়েছে।
“নওয়াজ এখন আর আগের মতো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলেন না। বাস্তবতা হলো, পাকিস্তানে কোনও নেতার পেছনে সেনাবাহিনী থাকলে তার নির্বাচনে সফলতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ইকোনোমিক টাইমস।