Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

বৈভবের ক্রিকেট থেকে অভাবী ক্রীড়াঙ্গনে পাপন   

পাপন-২
[publishpress_authors_box]

‘ক্রিকেট ফ্যানাটিক’ থেকে তাকে হতে হবে ‘স্পোর্টস ফ্যানাটিক’। যার সব উৎসাহ-আবেগ ছিল ক্রিকেট ঘিরে তার পক্ষে বাকি খেলাগুলোকে একইভাবে গোগ্রাসে গেলা কী একটু কঠিন হয়ে যাবে না! বলছি, নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কথা।

তাকে পুরো দেশ চেনে ক্রিকেটের দন্ডমুন্ডের কর্তা হিসেবে। খেলাটা তিনি ভীষণ পছন্দও করেন, সেটা তার নানান কথাবার্তায় পরিষ্কার। বিসিবি প্রধানের পদটা তিনি উপভোগও করতেন। এখনো করেন, হয়তো-বা বিসিবির নতুন নির্বাচনের আগপর্যন্ত উপভোগের সুযোগও পাবেন। তাই খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ পেয়ে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে খুশি কিনা।

তুমুল জনপ্রিয় ক্রিকেটের আড়ম্বর, সাচ্ছল্যের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া পাপন সবসময় থাকতেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনার শীর্ষে। ক্রীড়াঙ্গনের মন্ত্রীও অতো ফোকাসে থাকতেন না। সেই জৌলুস ও ধনী ফেডারেশেন ছেড়ে তাকে ঢুকতে হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনের অভাবী সংসারে। ক্রিকেটের যখন ১ হাজার কোটি টাকার মতো এফডিআর-ই আছে, তখন এই অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়ার বাজেট মাত্র ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। শুধু ক্রীড়ার বাজেট অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ ক্রিকেট বোর্ডের এফডিআরের চেয়েও অনেক কম!

এবার দেখবেন তিনি মুদ্রার উল্টো পিঠ। এই ক্রীড়াঙ্গনে টাকার অভাবে খেলোয়াড়রা ট্রেনিং চালিয়ে যেতে পারেন না, ফেডারেশন পারে না ভাল কোচ আনতে। এমনকি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া হয় না অর্থাভাবে। এছাড়া খেলার ভাল মাঠ নেই, ভাল একটা জিমনেসিয়ামও নেই। চারদিকেই অভাবের গল্প। এদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এ-এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। যেখানে দাঁড়িয়ে বিলাসী ক্রিকেটকে শুধু ঈর্ষা করতে পারেন অন্য অ্যাথলেটরা। খেলাধুলা তাদের উন্নত জীবনেরও সন্ধান দিতে পারে না। অনিশ্চয়তার ঘেরা এই ক্রীড়াঙ্গন ছেড়ে তাদের অনেকে হচ্ছেন দেশান্তরী।

সরকারের সঙ্গতি কম হলেও ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন দেওয়া কমেনি, সংখ্যাটা ইতিমধ্যে ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকজন আছে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন খেলা ফেরি করে এখানে নতুন ‘দোকান’ খুলে বসে। তারা এই অজানা-অচেনা খেলোয়াড়হীন খেলার অনুমোদনের জন্য ধর্না দেয় সরকারের কাছে। সরকারেরও অবশ্য কোনো নীতিমালা, কোন খেলাগুলোকে প্রাধান্য দেবে সেটাই ঠিক করেনি। এজন্য অভাব হয় আরো তীব্রতর। এই অর্থাভাব ঘুচিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে সচল করাই নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীর বড় চ্যালেঞ্জ।

মিরপুরে সংবাদমাধ্যমে কথা বলছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন (ফাইল ছবি)

ঠিকঠাক সচল করতে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে দরকার যোগ্য ক্রীড়া সংগঠক। বেশিরভাগক্ষেত্রে এসব চেয়ার দখল করে আছে রাজনৈতিক লেভেলধারীরা। তারা মাঠের খেলার চেয়ে বরং নিজেদের মোক্ষলাভের খেলায় মেতে উঠেন। ফেডারেশনের চেয়ারকে বানান ওপরে উঠার সিঁড়ি। এজন্য ফেডারেশনে কুট-কাচালিও বেশি। এই করে দেশের জনপ্রিয় খেলাগুলো এখন ঐতিহ্য হারিয়ে ধুঁকছে। হকির দিকে এখন আর তাকানো যায় না। বিবর্ণ হয়ে গেছে দেশের অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার। সাফল্যের চেয়ে দুর্নীতি ও অন্য কারণে ফুটবল শিরোনামে আসে বেশি।

ফুটবলে ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুললেই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রায় সময় অজুহাত দেন অর্থাভাবের। ফিফা-এএফসির বার্ষিক অনুদানের পরও তার ফেডারেশনে সংকট থাকে চরমে। যদিও সংকটের মূল কারণ হলো, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাহীনতা। দুর্নীতির কারণে ২০২৩ সালে ফিফা নিষিদ্ধ করেছে ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে। ফিফা তদন্ত করেই দিয়েছিল এই শাস্তি। এরপর ফেডারেশন ‘অধিকতর তদন্তের’ নামে একটা তামাশা করেছিল সহ সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে করা সেই তদন্তে কী উঠে এসেছে, সেটা কেউ জানে না। সভাপতি নিজের একান্ত সচিব ইমরানকে বানিয়ে দেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক। নিজেদের খেয়াল খুশি মতো একটা জনপ্রিয় খেলাকে শেষ করে দিচ্ছেন ফেডারেশনের কর্তারা।

এক সময় কাজী সালাউদ্দিনই নিয়ে এসেছিলেন সিটিসেল, গ্রমীণফোনসহ অনেক বড় বড় স্পন্সর। প্রথম চুক্তি শেষ করে কেউ আর ফেরেনি দ্বিতীয়বার। এখন তাকে দেখলে “স্পন্সর কর্তারা পিছনের দরজা দিয়ে পালায়”। এটা বাফুফে সভাপতিরই কথা। সত্যি ফুটবলের স্পন্সর পাওয়া বড় কঠিন হয়ে গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ফুটবলের সহ সভাপতি হওয়ায় এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তাদের স্পন্সরে গত দুই বছর ধরে চলছে ফুটবলের কয়েকটি ইভেন্ট। এভাবেই কোনো রকমে চলছে খেলাটি। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগোনো না গেলে জনপ্রিয় খেলাটির দুর্দশা কখনো কাটবে না। এজন্য লাগবে অর্থ ও ফেডারেশনে সুশাসন। এসব নিশ্চিত করে ফুটবলকে পথে ফেরাতে পারলে, সেটা হবে ক্রীড়ামন্ত্রীর বড় সাফল্য।

ওদিকে অনেক সম্ভাবনাময় হকি খেলাটি অদক্ষ সংগঠকদের হাতে পড়ে শেষ হয়ে যেতে বসেছে। ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে অদক্ষ ও কুচক্রী ফেডারেশনের অনাগ্রহে ঢাকার বাইরে হকি খেলার চলই উঠে যাচ্ছে। বিকেএসপি তার হকির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে ঝাঁপ ফেলে দিতে হবে হকি ফেডারেশনের। এরপরও তাদের হুঁশ নেই। মাঠের খেলা নিয়ে নেই বিশেষ আগ্রহ। এফডিআর ভাঙিয়ে খেতে খেতে এখন তহবিল নামিয়ে এনেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। এখানেও কান পাতলে শোনা যাবে অর্থাভাবের আহাজারি। বলবে, খেলা করতে পারি না টাকার অভাবে।

ক্রিকেট বাদ দিলে পুরোটাই যেন তৃতীয় বিশ্ব। অভাব-অনটনের পৃথিবী। ক্রীড়াঙ্গন জুড়েই আছে তার আহাজারি ও ক্রন্দন। বিত্ত-বৈভবের ক্রিকেট থেকে অভাবী সংসারে পা রেখেছেন নাজমুল হাসান পাপন। নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীর সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত