বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে নিবন্ধিত করদাতার হার ছয় শতাংশেরও কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৯৭ লাখ।
অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে কেবল ভারতেই নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। জনসংখ্যা শত কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া দেশটিতে সক্রিয় করদাতার সংখ্যা কোটি পেরিয়েছে।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের পেছনে। অবশ্য পাকিস্তান ছাড়া অন্য দেশগুলোর জনসংখ্যাও বেশ কম।
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এখনও এক কোটি হয়নি। আবার যারা নিবন্ধিত তাদের সকলেও বছর শেষে আয়–ব্যয়ের খবর জানিয়ে রিটার্ন জমা দেন না। যদিও টিআইএনধারীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
চলতি বছর মাত্র ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৪০৬ জন করদাতা বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছেন। জানুয়ারির শেষ দিন ছিল রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই করদাতারা তাদের রিটার্ন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআর। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৬৬১।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার সাড়ে ৩৫ লাখ করদাতার কাছ থেকে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। এই অংক গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
গত বছর আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা প্রাথমিক হিসাব। রাত সাড়ে ৮টার পরেও অনেকে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। অনেকে আবার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। সে সব যোগ হলে করদাতার সংখ্যা ও করের পরিমাণ বাড়তে পারে।”
২০১৪-১৫ অর্থবছরের আগে সনাতনী পদ্ধতির টিআইএন ব্যবহার করা হতো। ওই বছর থেকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়। সেসময় দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখের মতো। তার বিপরীতে রিটার্ন জমা পড়েছিল প্রায় ১৩ লাখ।
কিন্তু গত সাত বছরে ই–টিআইএনধারীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়লেও রিটার্ন জমাদানকারীর সংখ্যা তেমন একটা বাড়েনি।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সক্রিয় ও কার্যকর করদাতার সংখ্যা বাড়ছে না। টিআইএনধারীরা কেন রিটার্ন দিচ্ছেন না, তা নিয়ে এনবিআরের বারবার নোটিশ দেওয়া উচিত। এমনকি জরিমানাও করা যেতে পারে।”
রিটার্ন দেওয়া মানে কর দেওয়া নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শূন্য রিটার্নও হতে পারে। তবে রিটার্ন দিলে করদাতাদের যেন হয়রানি করা না হয় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। রিটার্নে দেওয়া তথ্য সম্পর্কে কর কর্মকর্তারা যেন অযৌক্তিক প্রশ্ন না করেন। দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।”
এমন পরিস্থিতি তৈরি করা গেলে রিটার্ন জমার পরিমাণ বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।