Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫

চিকিৎসকদের নিয়ে আসিফ নজরুলের বক্তব্যে এনসিপি, এনডিএফ, ড্যাবের নিন্দা

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

চিকিৎসকদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের শামিল’ উল্লেখ করে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি)।

এমন বক্তব্যের জন্য উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে ‘ক্ষমা চাইতে হবে’ জানিয়ে দলটি বলেছে, ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের নিয়ে কোনও ধরনের অবমাননাকর বক্তব্য সহ্য করা হবে না।

চিকিৎসকদের অনেকেই রোগীদের স্বার্থ না দেখে ওষুধ কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করেন বলে গত শনিবার মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। চিকিৎসকরা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে কাজ করছেন, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ আগস্ট এনসিপির হেলথ উইংয়ের প্রধান যুগ্ম মুখ্য আহ্বায়ক ডা. মো. আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এমন কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে জাতির অগ্রগামী স্বাস্থ্যসেনাদের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক বক্তব্য কেবল অগ্রহণযোগ্যই নয়, এটি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের শামিল।”

চিকিৎসক সমাজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। আসিফ নজরুলের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা যদি এভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেন, তবে তা সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

চিকিৎসকদের অপমান করার চেষ্টা মানে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিপন্ন করা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এ ধরনের বক্তব্য চিকিৎসক সমাজের মনোবল ভেঙে দেয়, যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

এনডিএফের প্রতিবাদ
আসিফ নজরুলের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)।

এনডিএফ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘অবৈজ্ঞানিক, অনভিপ্রেত এবং অনাঙ্ক্ষিত’।

বিবৃতিতে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো নজরুল ইসলাম এবং জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের পক্ষে বলা হয়, চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও পেশাদারিত্বকে অস্বীকার করার শামিল এবং যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার এ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে তার অযাচিত মন্তব্য প্রত্যাহার এবং দেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনডিএফ। 

বিবৃতিতে এনডিএফ বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যেখানে তার স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কথা, তার পরিবর্তে চিকিৎসকদের সমালোচনায় মুখর হওয়া ভালো ইঙ্গিত বহন করে না। তাদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা মানে কেবল চিকিৎসকদের নয়, বরং সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও দেশের জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।

এনডিএফ দাবি জানিয়েছে, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং দেশবাসীর কাছে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

ড্যাব বলছে অবমাননাকর
আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ ও ‘অবমাননাকর’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন অবমাননাকর মন্তব্য করা চিকিৎসকদের নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আত্মত্যাগকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এটি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনগণের আস্থা সংকুচিত করতে পারে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা আসিফ নজরুলকে মন্তব্য পুনর্বিবেচনা করা এবং জনস্বার্থে ব্যাখ্যা বা দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ড্যাব চিকিৎসাসেবার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে কাজ করে যাবে। আমরা সবসময় গঠনমূলক সংলাপকে স্বাগত জানাই, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিএনপির নিন্দা 
আসিফ নজরুলের বক্তব্য চিকিৎসক সমাজের আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।

রবিবার এক বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশব্যাপী কর্মরত চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে আসিফ নজরুলের বক্তব্যে গোটা চিকিৎসক সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ঢালাওভাবে চিকিৎসকদেরকে ‘ওষুধ কোম্পানির দালাল’ আখ্যা দিয়েছেন এবং পেশার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা শুধু অযৌক্তিকই নয়, চিকিৎসক সমাজের আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।

তিনি বলেন, “যে দেশে এখনো বাবা-মা তাদের সন্তানকে সবার আগে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন দেখেন সেদেশে তার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

যা বলেছিলেন আসিফ নজরুল
গত শনিবার চিকিৎসকদের অনেকেই তাদের রোগীদের স্বার্থ না দেখে ওষুধ কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করেন বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

রোগীদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ তোলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার নির্দিষ্ট সময় কেন বরাদ্দ থাকে, যা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে দেখা যায় না।”

‘চিকিৎসকরা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে কাজ করছেন?’ এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তার একজন নিম্ন আয়ের কর্মচারীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৪টি টেস্ট দেওয়া হয়েছিল। পরে ময়মনসিংহে পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে টেস্ট ছাড়াই তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।

গরিব রোগীদের ওপর এই অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। আইন উপদেষ্টার ভাষ্য, চিকিৎসকরা রোগীদের কথা ঠিকমতো শোনেন না, রোগী কথা বলার মাঝেই প্রেসক্রিপশন লেখা শুরু করে দেন, অথবা বিরক্তি নিয়ে কথা বলেন। বিদেশে চিকিৎসকদের কথা শোনার প্রশংসা করে বলেন, “সেখানে ডাক্তার এত মন দিয়ে কথা শোনেন যে রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যান, আত্মবিশ্বাস ফিরে পান।”

রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের ‘খারাপ ব্যবহার’ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, বেতন কম পাওয়ার ফলেই তারা এমন আচরণ করেন। তিনি বলেন, একজন প্রশিক্ষিত নার্স মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন পান, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে তার নিজের বাড়ির কাজের লোক এর সমান বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পেতেন।

নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও ভালো বেতন দিতে হাসপাতাল মালিকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক মালিকের কোটি টাকার বাগানবাড়ি থাকলেও তারা কর্মীদের সামান্য বেতন বাড়ান না। মুনাফা থেকে ১০ ভাগ টাকা কর্মীদের পেছনে খরচ করলেও হাসপাতালের সেবার মান অনেক উন্নত হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত