Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রুহের তলে সুরের স্রোত বয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যান্ড ‘পেনোয়া’

penoya-band-members
[publishpress_authors_box]

‘পেনোয়া’ মানে হলুদ ফুল। কক্সবাজার-এর আদি নাম। সে নাম নিয়েই বাংলাগানে নতুন সুবাস ফেরি করছে কক্সবাজারে বেড়ে ওঠা একদল কবি, সুরকার ও মিউজিশিয়ান। তাদের গানে মুগ্ধ হচ্ছেন শ্রোতারা। নিরবে শ্রোতার মনে স্থান করে নেয়া ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম ‘এ রুহের তলে’। ইতিমধ্যে অ্যালবামের ছয়টি গান ইউটিউবে উন্মুক্ত হয়েছে। গানগুলো ইতিমধ্যেই লক্ষ শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে কোন প্রচারণা ছাড়াই।

চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ঢাকায় অঁলিয়াস ফ্রঁসেজে ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে দু’টি শো করেছে সমুদ্র তীরের এ ব্যান্ড। অনেক ব্যান্ডের ভিড়ে নতুন এই গানের দলটি কেমন? জানা যাক পেনোয়া সম্পর্কে। কেমন করে তৈরি হয় তাদের গান।

‘কথা’ পেনোয়ার গানের প্রাণের অর্ধেক। দলটি জানায়, এই অর্ধেকই আগে তৈরি হয়। গানের কথাগুলোর মধ্য দিয়েই দলটি প্রবাহিত করতে চায় অস্তিত্ব ও জীবন, দর্শন, পুরাকথা এবং প্রাণের ইতিহাস। পেনোয়া ব্যান্ডের প্রধান ইয়াসির আরাফাতই সবগুলো গানের গীতিকার ও প্রধান ভোকাল।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “পেনোয়া শুধুই একটা ব্যান্ড নয়। এটা একটা প্রয়াস, যেখানে এই ভূখণ্ডের দর্শন, ঐতিহ্য, পুরাকথা এবং লোকাচারবিদ্যা নিয়ে পুনরনুসন্ধান করা হয়। সাথে সাথে সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা অজস্র ভাষার সঙ্গে এর সংযোগ বুঝতে চায়। বৈচিত্র্যময় ভাষার মাঝে ফুটে থাকে যে আশ্চর্য ফুল, সেই ফুলের খুশবু ধরে ধরে হাঁটতে চায় পেনোয়া। কথায় ও সুরে বাংলা ও বিশ্ব-গানের যে ঐশ্বর্যময় সমুদ্র আছে সেখানে পেনোয়াও একটা ভেলা ভাসাতে চায়। ”

দুটো গানের কথা একটু পড়াই যাক। ‘এ রুহের তলে’ গানটি যে সত্যিই রুহের তলে সুরের স্রোত বয়ে নিয়ে চলে। “যে তোমার সাথে, গোল পৃথিবীর ভ্রমণে, বারেবার দেখা হয় যে অনন্ত পথে, সে তোমার মোহে ঘুরতে আবার এসেছি, এ সমস্ত পথের ‘পরে ঘর বেঁধেছি, এক ফালি রাত্রি ঘুমায় মৃদু শান্ত বাতাস ও পবিত্র আঁধার ঘিরে রয়..”

‘শুনতে যা চাও’ গানটি লক্ষাধিক স্রোতার ভালোবাসা পেয়েছে কোন প্রচারণা ছাড়াই। গানটির কথাগুলো এমন- “এ জীবন তুমি ক্যান নিলে? সবকিছু ঝুট লাগে। ভুলভাবে সত্য জানার ফিকিরে, বেপথের মোড়ে ভাবছ দাঁড়ায়ে হবে ঠিক গেলে কোন দিকে, কোন ধামে, কোন মোকামে!”

এমন সব কথার গভীরে ডুব দিয়ে যিনি সুর ধরে আনেন তিনি ভগবান রুদ্র। “মানুষের আদি অকৃত্রিম অনুভূতির প্রকাশই যেন জাহির করতে চায়৷ হৃদয় হতে উৎসরিত আবেগের নহরে ডুব দিয়ে সবচেয়ে পুরোনো নুড়িটাই যেন সে তুলে আনতে চায়। ভগবান রুদ্র-ই এই কাজটির পুরোধা ব্যক্তি। পেনোয়ার প্রধান সুরকার এবং গায়ক। গল্পই তার গানের প্রাণ।” এভাবেই নিজ ব্যান্ডের সুরকারকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ইয়াসির। তবে, শুধু রুদ্রই নন, আছেন গায়ক ও সুরকার রথিন পালও, তার সুরও গানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।

পেনোয়া ব্যান্ডের এ পর্যন্ত প্রকাশিত গানগুলো হলো- ‘এ রুহের তলে’, ‘রাতের সাঁতার’, ‘কুহু ডাকের হন্’, ‘পাহাড়ের বুকে’, ‘ধ্যানী নদী’, ‘গোলকধাঁধা’, ‘শুনতে যা চাও’।

ইয়াসির বলেন, “আমরা শ্রোতাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ। প্রথম অ্যালবামের গানগুলো পুরোপুরি প্রকাশিত হয়নি। এরই মধ্যে এত ভালো রেসপন্স পাচ্ছি, আমরা দারুণ অনুপ্রাণিত। ‘শুনতে যা চাও’ গানটি দেশের সাম্প্রতিক অস্থির সময়কে ঘিরে তৈরি।”

তবে, জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাতে চায়না দলটি। নতুন গান তৈরিকেই প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আগামী বছরের মধ্যে অর্ধশতাধিক গান তৈরি পরিকল্পনা তাদের। এরই মধ্যে গত দুই বছরে পেনোয়া ৩০টির বেশি গান বানিয়েছে। ‘এ রুহের তলে’ অ্যালবামে ১৩টি গান থাকবে বলে জানায় তারা। প্রকাশিত গানের বাইরে বাকিগানগুলোও প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আগামী দু’ মাসের মধ্যে।

ইয়াসির বলেন, “নতুন গান বানানোর দিকেই পেনোয়া সবচেয়ে বেশি মনোযোগী। প্রতিনিয়তই পেনোয়া গান বানাতে চায় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সেটাকে উপস্থাপন করতে চায়৷ পেনোয়া সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা অজস্র গানপ্রেমীর সংস্পর্শে আসতে চায়। এর মাধ্যমেই পেনোয়া নিজেকে উত্তরোত্তর ঋদ্ধ করতে চায়।”

প্রথম অ্যালবামের গানগুলো প্রকাশ করার পাশাপাশি প্রস্তুত হচ্ছে দ্বিতীয় অ্যালবামের গানগুলোও। শুধু অ্যালবাম প্রকাশই নয়, নিয়মিত শো শুরু করছে তারা। আগামী বছর অর্ধশতাধিক স্টেজ শো করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যান্ডটির।

“আমরা প্রচুর ডাক পাচ্ছি। তবে, বেছে বেছে ভালো আয়োজনগুলোতে যুক্ত হতে চাই আমরা। তবে, যারা সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে ডাকবে তাদের অগ্রাহ্য করার ক্ষমতাও নেই আমাদের।”

কক্সবাজার থেকে উঠে আসা ব্যান্ডটি প্রসঙ্গে কবি ও গবেষক রহমান মুফিজ ব্যান্ডটি প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গদ্যে লিখেছেন, “… এরা যেন আদিতে ফিরে যেতে চাইছে। এরা যেন মাটি খুঁড়ে প্রত্নবিশারদের মতো তুলে আনতে চাইছে নিজেদের অস্তিত্ব, আত্মপরিচয়। হলুদ মাটির গন্ধের মধ্যে, পাহাড়ি টিলা, সুউচ্চ বৃক্ষের সারবাঁধা ঐকতানের মধ্যে, পাতার মর্মর ধ্বনির মধ্যে এরা এমন এক সভ্যতার সুর খুঁজে নিতে চাইছে যা এ জনপদে এর আগে কেউ খোঁজেনি।”

তবে, ইয়াসির বললেন, শুধু কক্সবাজারেই সীমাব্ধ থাকতে চাননা তারা। সমুদ্র ‍উপকূলে বেড়ে ওঠা জীবন থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন তারা ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্বময়।

পেনোয়া ব্যান্ডের সঙ্গে আরও আছেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন লিমন। তিনি একজন সংগীতশিল্পী, গবেষক। বাংলার নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র নিয়েই তার আগ্রহ ও সাধনা। লিমন নিজের বানানো অনেকগুলো পরীক্ষামূলক যন্ত্র নিয়ে পেনোয়ার সাথে বাজাচ্ছেন এবং গাইছেন।

ড্রাম বাজাচ্ছেন অনিন্দ্য পাল জিৎ। গিটারে রথিন পাল ও ভগবান রুদ্র, অনিন্দ্য পাল জিৎ রিদম সেকশনে। মিউজিক ভিডিওগুলো নির্মাণ করছেন শিল্পী গবেষক ও নির্মাতা পংকজ চৌধুরী রনি এবং রাফায়েত নেওয়াজ। মিউজিক প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছেন ফারমিন ফয়সাল। ব্র্যান্ডিং দেখছেন সমুদ্র সন্তান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত