নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নতুন যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন, তাতে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে নতুনদের দেখা যাবে।
বিদায়ী মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাদ পড়েছেন।
ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়গুলোতে নতুনরা দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
নতুন সরকারে যে ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে বিদায়ী মন্ত্রিসভার ২৮ জনই নেই।
নতুন ১৭ জন ডাক পেয়েছেন পরবর্তী সরকারে। তার মধ্যে ১১ জন নতুন মন্ত্রী হচ্ছেন, যাদের কয়েকজন গত মন্ত্রিসভায় না থাকলেও আগে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সাতজন এই প্রথম প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
বুধবার শেখ হাসিনা বঙ্গভবন ঘুরে আসার পর রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে ২৫ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন)।
এছাড়া ১১ জন পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী হতে শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ। এই তালিকার সবাই ভোটে জিতে এসেছেন।
পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে এবারও থাকছেন বিদায়ী মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, দীপু মনি, মো. তাজুল ইসলাম।
আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট) এবারের মন্ত্রিসভায়ও থাকছেন।
পুরনোদের মধ্যে এবার মন্ত্রী হয়ে ফিরছেন মুহাম্মদ ফারুক খান (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।
শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালের সরকারের উপমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ফিরছেন পূর্ণ মন্ত্রী হয়ে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও নারায়ণ চন্দ্র চন্দও পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন এবার।
চিকিৎসক সামন্ত লাল সেনকে টেকনোক্র্যাট হিসেবে পূর্ণ মন্ত্রী করা হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও এই প্রথম ডাক পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়।
এছাড়া নতুন আসছেন সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ, সাবেক আমলা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম, ময়মনসিংহের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম।
বিদায়ী মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মধ্যে ফরহাদ হোসেন, মো. ফরিদুল হক খান, মহিবুল হাসান চৌধুরী পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন।
১১ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে নতুন আসছেন সিমিন হোসেন রিমি, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মহিবুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২) ও আহসানুল ইসলাম (টাঙ্গাইল-৬)।
নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জাহিদ ফারুক এবারও প্রতিমন্ত্রীই থাকছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা ও পুরনো মন্ত্রিসভার তুলনা করলে দেখা যায়, পররাষ্ট্র, অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, ভূমি মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ আসছে। কেননা এই মন্ত্রীদের সবাই বাদ পড়েছেন।
এমন এক সময়ে শেখ হাসিনা নতুন সরকার গঠন করছেন, যখন বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ভিসা নীতির খাঁড়ার পর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও ঝুলছে।
এই প্রেক্ষাপট এবং বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির একদিন আগেই সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, এমন ব্যক্তিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হোক, বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখার যোগ্যতা যার আছে।
এক্ষেত্রে মোমেন এবার বাদ পড়েছেন, নানা মন্তব্যের জন্য নিজেকে বারবার বিতর্কিত করে তুলেছিলেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বাদ পড়েছেন।
কোভিড মহামারীর পর ইউক্রেইন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে টানাপড়েন তৈরি করেছে, তার অভিঘাত মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
এই সংকটকালে সঙ্কটকালে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, এমন অর্থমন্ত্রী চাইছিলেন ব্যবসায়ীরা। রাজস্ব আদায় বাড়াতে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে সংস্কার করতে সাহসী ব্যক্তিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেখার প্রত্যাশা অর্থনীতিবিদদেরও।
শেখ হাসিনা শুধু অর্থমন্ত্রীই নন, আর্থিক খাতে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও পুরনোদের বাদ দিয়েছেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারও বাদ পড়ার তালিকায়। ফলে আর্থিক খাতে আসছে নতুন নেতৃত্ব।
দেশের ডলার আয়ের বড় উৎস রেমিটেন্সের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ইমরান আহমেদও বাদ পড়েছেন।
মহামারীর সময় দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছিল। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে নিয়ে নানা সমালোচনাও হচ্ছিল। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
দেশের উৎপাদনের চালিকাশক্তি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষিবিদ রাজ্জাককে বাদ দেওয়া হয়েছে; যদিও খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার বহাল থাকছেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ছাড়াও পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন শ ম রেজাউল করিম, নুরুল ইসলাম সুজন, গোলাম দস্তগীর গাজী, মোস্তাফা জব্বার, নুরুজ্জামান আহমেদ, শাহাব উদ্দিন, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং।
প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন স্বপন ভট্টাচার্য্য, শরীফ আহমেদ, আশরাফ আলী খান খসরু, জাহিদ আহসান রাসেল, মুন্নুজান সুফিয়ান, কে এম খালিদ, জাকির হোসেন, এনামুর রহমান, মাহবুব আলী, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, এনামুল হক শামীম ও হাবিবুন নাহার।
এদের মধ্যে স্বপন, এনামুর ও মাহবুব আলী এবারের নির্বাচনে হেরেছেন।
আরও পড়ুনকেমন মন্ত্রী চায় সবাই