বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘাত-সহিংসতার সঙ্গে আশপাশের হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে আহত রোগীর সংখ্যা।
ঢাকার বেশ কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত দুপুরের পর থেকে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীর শরীরেই ছিল গুলির আঘাত।
এছাড়া মারধর, লাঠির আঘাত, ইট-পাটকেলে আহত রোগীও রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, সারাদিনে সংঘর্ষে আহত অন্তত ১৬০-১৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, “রোগীদের সবাইকে ভর্তি রাখা হয়নি। রাত ৮টা পর্যন্ত ৪৬-৪৭ ভর্তি আছেন। আহত রোগীদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।”
এছাড়া সাতজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
তবে রোগী ও মৃত্যুর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
দেশজুড়ে সংঘর্ষ-গুলি, নিহত অর্ধশতাধিক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে সকালে ঢাকার শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হামলা চালানো হয়।
এতে গুরুতর আহত হাসপাতালটির এক কর্মচারীকে আইসিইউতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ( এস্টেট) ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে জানান, হাসপাতালটির এক চিকিৎসকও গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর অন্তত ৪৫ জনকে বেসরকারি ল্যাব এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে চারজনের শরীরে বুলেট এবং বাকিদের শরীরে ছররা গুলি ছিল। এদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই চিকিৎসক জানান, আহতদের বেশিরভাগে অবস্থাই বেশ নাজুক ছিল। প্রত্যেকের শরীরেই ছিল একাধিক গুলির চিহ্ন। কারও কারও মুখ, বুক, পিঠ, মাথা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।
এখন শক্ত হাতে দমন, সিদ্ধান্ত সরকারের
ঢাকার উত্তরাতেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার নাজমুল হোসেন জানিয়েছেন, সকাল থেকে ১০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা। এদের মধ্যে আটজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুজনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে কেউ ভর্তি নেই, কোনও রোগীর মৃত্যুও হয়নি।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাব্বির আহমেদ খান সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে সহিসংতায় আহত ১৩ জন রোগী এসেছিলেন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন।
এই হাসপাতালেও কোনও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।