ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপা কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু লুসাইল স্টেডিয়াম দেখে অভিভূত। তার সতীর্থ আফঈদা খন্দকারের স্বপ্ন সার্থক হয়েছে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম দেখে। কারণ সেখানে তার প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার খেলে গেছেন। অন্যদিকে ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার ও শারমিন সুলতানা কাতারের এস্পাইয়ার একাডেমি দেখে বিমোহিত, “এখানে স্পোর্টসের সবকিছু আছে, এরকম একটা জায়গায় যদি আমাদের ইনজুরি পরবর্তী রিহ্যাব করার সুযোগ থাকতো!“
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাতার সফর শেষে দেশের চার নারী ক্রীড়াবিদ উচ্ছ্বসিত। প্রধান উপদেষ্টা এই চার নারী ক্রীড়াবিদকেও চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সামনে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চার মেয়ে ক্রীড়াবিদের কাতার সফর তাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও-কে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। দেশে তাদের সুযোগ-সুবিধাসহ নানান সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। বিশ্ববিখ্যাত কাতার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে নানা ইস্যুতে আমাদেরও কথা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মেয়েদের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক কিছুই আলোচিত হয়েছে। মেয়েদের জন্য আলাদা একটা থাকার ব্যবস্থা অর্থাৎ ডরমেটরি তাদের সহযোগিতায় হতে পারে। আলোচনা সবে শুরু হয়েছে, সামনের দিনে নিশ্চয়ই চমৎকার কিছু হবে।”
দেশে খেলোয়াড়দের ফ্যাসিলিটিজ কেমন এবং থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ সবকিছু খেলোয়াড়রা সিইও হিন্দকে বলেছেন জানিয়ে শাহেদা আক্তার রিপা বলেন, “এসবের দিকে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেছি। হিন্দ খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি আমাদের কথা রাখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমি আশাবাদী, আমরা এখান থেকে ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারব।”
রিপা জানান, “আমরা যখন হিন্দ-এর সাথে কথা বলছিলাম, তিনি খুব আবেগী হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা আমাদের জিম ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। খেলা পরবর্তী অবসর জীবনে আমরা কী করতে পারি, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। আমরা এস্পায়ার একাডেমিসহ কাতারের বেশ কয়েকটা স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি ঘুরে দেখেছি। বাংলাদেশের তুলনায় অনেক ভালো ফ্যাসিলিটিজ এখানে আছে। বাংলাদেশে একাডেমি ও স্টেডিয়ামগুলোর সুযোগ-সুবিধা কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি।”
জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, “কাতার সফরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর যখন প্রথম আমরা সরকার প্রধানের সাথে দেখা করতে যাই তখন প্রধান উপদেষ্টা স্যার কাতার সফরে আমাদের কী করণীয় সেটি খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে কাতারের কাছে তুলে ধরা। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।”
ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার প্রধান উপদেষ্টার ক্রীড়াপ্রীতি দেখে মুগ্ধ, “প্রথম যখন শুনেছি যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা সফরসঙ্গী হচ্ছি তখন বিশ্বাস হয়নি। সেসময় আমরা বিকেএসপিতে ক্যাম্প করছিলাম। তখন আমাদের ডাকা হয়। যখন দেখেছি যে প্রধান উপদেষ্টা স্যার নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে এত আগ্রহী তখন খুব ভালো লাগছে। সরকার প্রধানের সাথে এই প্রথম কোনও ট্যুরে এসেছি আমরা।”
তিনি বলেন, “কাতারে ফুটবল বেশি জনপ্রিয়, এখানে ক্রিকেটের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এখানে এসে আমরা ক্রিকেট খেলায় কাতারের ইনভলভমেন্ট কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও হিন্দকে বলেছি।”
কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও নিজেও একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন জানিয়ে সুমাইয়া বলেন, “হিন্দকে আমরা ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বাংলাদেশে যেতে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের এতটা গুরুত্ব দিবেন, ভাবিনি।”
শারমিন সুলতানা কাতার ফাউন্ডেশনের কাছে মেডিকেল সাপোর্ট চেয়েছেন, “আমাদের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হিন্দ। আমরা ওনার কাছে মেডিকেল সাপোর্ট চেয়েছি। কাতারে ইনজুরি রিহ্যাব আছে। এখানে সাপোর্টের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এছাড়াও তিনি বলেছেন, আমরা অবসর সময়ে ট্রেইনার হওয়ার ট্রেনিং নিতে পারি। ফিজিওথেরাপিস্টের ট্রেনিং নিতে পারি। এসব ক্ষেত্রে কাতার সহযোগিতার হাত বাড়াবে।”
বৈঠকে শেষে হিন্দ বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশেষ কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখনও সেটা সুনিদির্ষ্ট না হলেও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে কাতারের সহযোগিতায় ইতিবাচক কিছু হতে যাচ্ছে।