Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

নতুন সরকারি চাকরিজীবীরাও বাধ্যতামূলকভাবে আসবেন সর্বজনীন পেনশনে

SS-universal-pension-scheme-bd-210324
Picture of বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

নতুন সরকারি চাকরিজীবীরাও বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তবে এখন যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তারা বিদ্যমান নিয়মেই পেনশন পাবেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর সরকারি চাকরিতে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “পেনশন সুবিধা পান, এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আমরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসব। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ইতিমধ্যে এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

“শিগগিরই অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্যও আমরা এ ব্যবস্থা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে চালু করব।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশন ৪টি স্কিম নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ স্কিমগুলো হলো প্রবাস- প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীদের জন্য, প্রগতি- বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য, সুরক্ষা-স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য এবং সমতা-দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য।

তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার ফান্ড পরিচালনা ব্যয় সরকার বহন করায় এবং বিনিয়োগ মুনাফা জামাকারীদের মধ্যে বিভাজন হওয়ায় এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন স্কিম। ১৮ বছরের অধিক সব বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব হলে সবাই একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন, যা ভবিষ্যতে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

“ইতোমধ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্লাটফর্মে সর্বজনীন পেনশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন যে কোনও ব্যক্তি অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন এবং অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস-এমএফএসের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। অনলাইনেই তিনি তার পেনশন হিসাবে জমার পরিমাণ, প্রাপ্ত লভ্যাংশ ইত্যাদি সরাসরি দেখতে পারবেন।”

“তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সীমিত বা তথ্য প্রযুক্তি নেই এমন ব্যক্তিরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইন্টারনেট ক্যাফে ইত্যাদি স্থানে নিবন্ধন সম্পাদন করতে পারবেন।”

অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ পেনশন ব্যবস্থাপনার তহবিল পরিচালনার ব্যয় সরকার বহন করায় ও বিনিয়োগের মুনাফা জমাকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায়, এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন কর্মসূচি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোয় গিয়েও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান না থাকা বা কম জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। চাঁদা জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমেও চাঁদা জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। একজন চাঁদাদাতা অনলাইনেই সরাসরি দেখতে পারবেন তার জমা চাঁদার মোট টাকা ও লভ্যাংশের পরিমাণ।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পাশাপাশি একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের অংশ হিসেবে দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জায়গা দেন সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টিকে।

২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দেশে চারটি কর্মসূচি নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট মাসে নিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬৯ জনের। আর পেনশন তহবিলে জমা পড়েছে ৮২ কোটি টাকা।

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতাভুক্ত করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “ঘোষণা তো স্পষ্ট। এ বছরের ১ জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা এবং আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে তাদের ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসবেন।”

গত মার্চে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করল।

এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি মনে করে, এ কারণে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে আগ্রহ পাবেন না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত