Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মিথ‍্যা তথ‍্য প্রকাশে এখনকার আইনে কী সাজা

জাতীয় সংসদের অধিবেশন।
জাতীয় সংসদের অধিবেশন।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বহু জল ঘোলা হওয়ার পর গত বছর সেটি বাতিল করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন করে সরকার। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই সাইবার নিরাপত্তা আইনেও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে পরোয়ানা ছাড়া পুলিশের তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রয়ে গেছে।

এমন থাকার পরও ‘মিথ‍্যা তথ‍্য ও খবর বন্ধ করতে’ সরকার নতুন আইন করবে বলে রবিবার সংসদে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, “আমি সংসদ সদস্যকে জানাতে চাই, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং আরও কিছু আইন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সংসদে আসবে।

“তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নয়, মিথ্যা তথ্য এবং মিথ্যা খবর দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাতে বন্ধ করা যায়, সে ব্যবস্থা সরকার নেবে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সাইবার নিরাপত্তা আইনও মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনটি পাসের সময় সংসদে বিরোধিতাও হয়েছিল।  

সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, মিথ‍্যা তথ‍্য বা খবর বন্ধ করা কি সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়েও বন্ধ করা সম্ভবপর নয়?

মন্ত্রীর উদ্ধৃত সাইবার নিরাপত্তা আইনটি ঘেঁটে দেখা গেছে, এই আইনের বিভিন্ন ধারায় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে নানা ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে তথ‍্য প্রকাশ বিষয়ক বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা ও এর সাজাও।

ব্লক-অপসারণ কখন

ধারাগুলোর আওতায় রাষ্ট্র, দেশ ও ব‍্যক্তির ভাবমূর্তি, নিরাপত্তা ও মান রক্ষায় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কনটেন্ট ব্লক-অপসারণ করতে পারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)।

আইনটির আওতায় দেশে একটি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই এজেন্সির মহাপরিচালক যদি মনে করেন কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ‍্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য- উপাত্ত সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করছে, তাহলে তিনি ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারেন।

আবার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বিশ্বাস করে যে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা এর কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করছে, বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সঞ্চার করছে; তাহলে তারা তথ্য-উপাত্ত ব্লক-অপসারণের জন‍্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারে।

অনুরোধ পাওয়ার পর সরকারেক জানিয়ে বিটিআরসি তাৎক্ষণিকভাবে তথ‍্য-উপাত্ত ব্লক করতে পারে।

অপরাধ কখন

আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনও ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় করার জন‍্য তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ‍্য হবে।

কোনেও ব‍্যক্তি অপপ্রচার বা মিথ‍্যা জেনেও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছাড়তে কোনও তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করলে বা এতে সহায়তা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ‍্য হবে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এসব অপরাধের সাজা হতে পারে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ড।

ইলেকট্রনিক বিন্যাসের বাইরে কারও নিন্দা করে মানহানি ঘটালে কিংবা কাউকে হেয় করলে তা দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী অপরাধ। আবার দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে আছে, কেউ কোনও মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্ত প্রভাবিত করলে তার সাজা অন্তত দুই বছর কারাদণ্ড।

দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানিকর বলে বিবেচিত হয় এমন তথ‍্য ওয়েবসাইট বা অন‍্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন‍্যাসে প্রকাশ করা হলে তাও সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ‍্য হবে। এক্ষেত্রে সাজা হবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।

আইনটিতে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ড।

ওয়েবসাইট বা ইলেক্ট্রনিক বিন‍্যাসে ধর্মীয় মূল‍্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার মতো তথ‍্য প্রকাশ করলে তাও সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড।

বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটানোর উপক্রম হয়- ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এরকম কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করা হলে তাও একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার

উপরে যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর কোনও একটি কোথাও হয়েছে, বা হচ্ছে, বা হতে পারে- তা যদি কোনও পুলিশ কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন তখন কী হবে?

সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী ওই পুলিশ কর্মকর্তা সেক্ষেত্রে তার ওই ‘বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ’ করবেন। তারপর তিনি আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই ওই স্থানে তল্লাশি করতে পারবেন, সেখানে কেউ বাধা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নিতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট স্থানটিতে কোনো ব‍্যক্তি অপরাধ করেছেন বা করছেন বলে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই ব‍্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে; এই ক্ষমতা বিতর্কিত ও বাতিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত