Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পণ্যছাড়ে নতুন নিয়ম

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় নেওয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যগুলো।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় নেওয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যগুলো।
[publishpress_authors_box]

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো শাখা থেকে পণ্যছাড় পেতে এখন থেকে যাত্রীকে নিজে উপস্থিত থেকে আবেদন করতে হবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস নতুন এই নিয়ম জারি করে জানিয়েছে এই আদেশ সোমবার (১৯ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে।  

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর তথ্য জালিয়াতি করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা অবৈধ এবং নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়ের অভিযোগ উঠার পর এই আদেশ এল।

গত ১৫ আগস্ট ‘যাত্রীর তথ্য জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্যছাড়’ শিরোণামে একটি প্রতিবেদন সকাল-সন্ধ্যায় প্রকাশিত হয়। যাত্রীদের ভুয়া তথ্য সম্বলিত  আবেদনের ‘এ’ ফরম নিয়ে এখন তদন্ত চালাচ্ছে কাস্টম। এরই মধ্যে এল নতুন আদেশ।

নতুন আদেশে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রী নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যছাড়ের আবেদন করবেন এবং এই সংক্রান্ত প্রকৃত নথি জমা দেবে। এক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহযোগিতা নেওয়া যাবে, তবে যাত্রীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। আর পণ্যছাড় নেবেন যাত্রী।

এই কড়াকড়ির কারণে ভুয়া বা জালিয়াতি করে তথ্য দিয়ে পণ্যছাড়ের সুযোগ কমে আসবে বলে মনে করছে কাস্টম। তবে কমিশনার বদলে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে কি না—সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।

নতুন আদেশে বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টম কর্মকর্তাদের কড়াকড়ির মধ্যে আনা হয়েছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ পণ্য কার্গো শাখা থেকে ছাড়ের আবেদন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমে জমা পড়লে, তার বিস্তারিত তথ্য কাস্টম কমিশনারের দপ্তরে পাঠাতে হবে। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করবে কাস্টম হাউস। ফলে অনিয়ম কিছুটা কমবে। 

বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টমের সহকারী কমিশনার সোমেন কান্তি চাকমা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কাস্টম হাউস থেকে একটি নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি ফরম দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

“নতুন নিয়মে যাত্রীদের অবশ্যই আবেদন এবং পণ্যছাড়ের সময় উপস্থিত থাকতে হবে। আর যাত্রীর সব তথ্য, বোর্ডিং পাস, কার্গো সংক্রান্ত কাগজপত্র জেনুইন দিতে হবে। আর নির্ধারিত ফরমে আমরা সব তথ্য এবং ডকুমেন্ট কাস্টম হাউসে পাঠাতে হবে।”

“এর ফলে কেবল জেনুইন যাত্রীরাই পণ্যছাড় নিতে পারবেন, অন্যরা নয়।”

আগে কি তাহলে যাত্রীদের ফেইক তথ্য দিয়ে, ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে পণ্যছাড় করা যেত—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আগে যা হয়েছে হয়েছে, এখন জেনুইন যাত্রী ছাড়া আমরা পণ্যছাড় দেব না। সেটা যদি দিনে একটা আবেদন জমা পড়ে পড়ুক।”

এতদিন কীভাবে পণ্যছাড় হতো

একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আসার সময় তার সঙ্গে থাকা লাগেজের বাইরে আরও সর্বোচ্চ ১০০ কেজি পণ্য আনতে পারেন। কিন্তু এই পণ্য আনতে তাকে ঘোষণা দিতে হয় যে ফরমে, সেটাকে ‘এ’ ফরম বলে। এই ফরমে সব ডুকেমন্ট জমা দিয়ে যাত্রী নিজের স্বাক্ষর দিয়ে আবেদন করবেন। বিমানবন্দর কার্গো শাখায় থাকা কাস্টম কর্মকর্তারা সেটি স্ক্যান করে করবেন। শুল্কায়নযোগ্য পণ্য থাকলে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে সেটি ছাড়ের অনুমতি দেবেন। আর যাত্রী নিজেই বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর দিয়ে সেই পণ্য ছাড় করিয়ে নেবেন।

তবে অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে যত পণ্য কার্গো শাখায় ছাড়ের জন্য আবেদন জমা পড়ে, তার ৯০ শতাংশই ভুয়া তথ্যে। এখানে যাত্রী নিজেই জানে না যে তার নামে তার পাসপোর্টে পণ্যছাড় হচ্ছে। ফলে অবৈধ পণ্য যখন কার্গো শাখায় ধরা পড়ে, তখন যাত্রী এসে অস্বীকার করে এই ধরনের পণ্য সে আনেননি। এই ধরনের অনেকগুলো ঘটনা ধরা পড়ার পর কাস্টম স্থায়ী কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে বিমানবন্দর কার্গো শাখায় কর্মরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের একটি চক্র এই অবৈধ কাজটি করেই আসছে। এই সুযোগে সিগারেট, কোকেন, সোনার বার, আমদানি নিষিদ্ধ বিলাসী পণ্যসহ অনেক অবৈধ পণ্য পাচার করে নিয়ে যায়।

একজন যাত্রী যখন বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামেন তখন ইমিগ্রেশন পার করার সময় তার বোর্ডিং পাস, পাসপোর্ট কপি ইমিগ্রেশন বিভাগে সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে কোনো না কোনোভাবে যাত্রীর ডকুমেন্টগুলো পাচার হয়ে সেই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছে পৌঁছে। আর যাত্রীর অগোচরেই সেই কপিগুলো পৌঁছে যায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছে। সেই কপি দিয়েই পণ্যছাড়ের আবেদন ‘এ’ ফরম পূরণ করে কাস্টমে জমা দিয়ে পণ্য অনায়াসেই ছাড় করে নেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের চক্রটি।

পাঁচজনের একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ পণ্যছাড়ের কাজটি করে থাকে। তারাই মূলত অবৈধ ‘এ’ ফরম অনুমোদনের জন্য স্পিডমানি লেনদেনের অবৈধ কাজের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এই কাজে নিজেকে আইনিভাবে জড়ানো এড়াতে অনেকেই অন্যের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স ভাড়ায় ব্যবহার করে পণ্যছাড় নেয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেহেরুমা ইন্টারন্যাশনালের মালিক হাবিব উল্লাহ জসিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি বিমানবন্দরে কোনও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাজ করি না। ফলে আমার নাম থাকার সুযোগ নেই।”

পরে ২৪ জুলাই থকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত সেই প্রতিষ্ঠানের নামে ৭টি এ ফরম অনিয়মের মাধ্যমে ধরা পড়ার খবর উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “আপনাকে আমার নম্বর কে দিয়েছে? আর কোনও অনিয়ম হলো তো আমি কাস্টমে বলব। আপনাকে কেন বলব?”

নিজের লাইসেন্স অন্য কাউকে ভাড়া দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে ফোন কেটে দেন। আর ফোনে সাড়া দেননি।

তদন্ত চলছে

দেশে কারফিউ চলাকালীন অনিশ্চয়তার মধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে অনিয়মের মাধ্যমে পণ্যছাড় হয়েছে। খবর পেয়ে কাস্টম কমিশনারের নির্দেশে গত মঙ্গলবার অনেকগুলো ‘এ’ ফরম জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা এআইআর শাখা। সেই তালিকায় আল মোস্তফা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, এওএস ট্রেডার্স, নেহেরুমা ইন্টারন্যাশনাল, এসএনবি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ভিউ পয়েন্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নাম রয়েছে।

সেই ফরমগুলোর সঙ্গে পাসপোর্টের যাত্রীর তথ্য নিযে যাচাই-বাছাই চলছে। অনিয়ম প্রমাণের পর তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস।

কাস্টম গোয়েন্দা দল এআইআরের প্রধান ও কাস্টম উপ কমিশনার এ কে এম খায়রুল বাশার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের তদন্ত চলমান আছে। অনিয়ম প্রমাণ হলে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত