নিউ ইয়র্কের লিন্ডি জুডিশ তার বাড়ির প্রতি কোণ সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। তার গোছানো হাতের ছোঁয়া থেকে বাদ যায়না ঘরের সিলিং, এমনকি ছাদঘরের কাকের বাসাটাও। তবে রেফ্রিজারেটরের তাকগুলো কেন বাদ যাবে?
যেই ভাবা সেই কাজ।
জুডিশ তার ফ্রিজের ভেতরটা তাই এমনভাবে সাজালেন, যাতে দেখে মনে হয় এটা বাড়িরই একটা কক্ষ। ফ্রিজের ভেতর এভাবে সাজানোর একটি গালভরা নাম রয়েছে- ফ্রিজস্কেপিং। টিকটকে আজকাল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্রিজের ভেতর সাজানোর এই চলটি। ‘ফ্রিজস্কেপিং’ করে টিকটকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। টিকটকে তার সমাদরও বেশ।
জুডিশের ফ্রিজস্কেপ খুব সুচিন্তিত এবং সাজানো। ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়েই সেসব সাজানো হয়। ফ্রিজের ভেতরটাকে আকর্ষণীয় আর মনোরম করে তুলতে ব্যবহৃত হয় নানাকিছু। যেমন, অ্যাসপারাগাস রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় ফুলদানি। নানা রঙের নান্দনিক গোলাপি কাচের ছোট কলস, অ্যান্টিক সিরামিক ইত্যাদি ধরে রাখে একেকটি আইটেম। জুডিশের ভাষায়, “এমনকিছু (ব্যবহার করি) যেগুলো ফ্রিজের খাবার দাবারকে খুব নান্দনিক করে তুলবে।”
যেভাবে এলো ফ্রিজস্কেপ
ফ্রিজস্কেপ- এর উদ্ভব কিন্তু টিকটকে নয়। এর শুরুটা জানতে হলে আমাদের খানিকটা পিছিয়ে যেতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত ডিজাইনার এবং লাইফস্টাইল ব্লগার ক্যাথি পারডু ২০১১ সালে সর্বপ্রথম তার এক ব্লগ পোস্টে এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
পার্ড্যুর ধারণার ‘ফ্রিজস্কেপিং’ অবশ্য এখনকার মতো এতোটা জাঁকজমক ছিল না। ফ্রিজ পরিস্কার করবার চাইতেও তার বেশি মনোযোগ ছিল খাবার ফ্রিজে নান্দনিক সব পাত্রসহ মজুদ করার দিকে।
পার্ড্যুর ভাষায়, “প্রতিদিনের খাবার দাবার রাখা উচিত এমন সব নান্দনিক পাত্রে যাতে ফ্রিজ খুললেই ভেতরটা খুব সুন্দর দেখায়।”
রেবেকা বিংহাম একটি সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ের দোকানের মালিক। টিকটকে তার পণ্যের প্রচার করতে ভিডিও পোস্ট করেন। সেই টিকটকেই তিনি খোঁজ পান ফ্রিজস্কেপের। ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা দেখে তিনি এতোটাই অবাক হয়ে যান যে, কেউ সচেতনভাবে এই ভিডিওগুলো টিকটকে পোস্ট করছে তা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল বিংহামের। শেষমেশ আইডিয়া ভালো লেগে যায় তার।
একসময় নিজেই তার ফ্রিজস্কেপের একটি ভিডিও পোস্ট করেন টিকটকে। তাতে ছিল মোমবাতি, ফুলদানি, ছোট আয়না এবং এমব্রয়ডারি করা আর্ট ওয়ার্ক। বাড়ির প্রায় কাজেই লাগেনা এমন জিনিস দিয়ে তিনি তার ফ্রিজ ভরিয়ে ফেলেছিলেন।
বিংহাম স্রেফ মজা করেই এই ফ্রিজস্কেপ ট্রেন্ডে নাম লিখিয়েছিলেন। আর ফ্রিজস্কেপিং করতে তিনি যা যা ব্যবহার করেছিলেন, ভিডিও শেষ হওয়া মাত্রই সেসব তিনি বের করে রাখেন। কারণ এতে ব্যবহৃত একটি জিনিসও খাবারের জন্য নিরাপদ ছিল না। কিন্তু তিনি আবিষ্কার করেন, তার ভিডিওটি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী বক্তব্য হাজির করছে। কারণ বর্তমানে খাবার-দাবার দিয়ে ফ্রিজস্কেপিং করার চেয়ে ফেলনা জিনিস দিয়ে ফ্রিজস্কেপিং করা নিশ্চয়ই নিখরচা।
এ ব্যাপারে বিংহামের বক্তব্য হলো, “ফ্রিজ হলো খাবার মজুত করে রাখার একটি দরকারি গেজেট। এটাকে যখন নান্দনিক বস্তুতে পরিণত করে লোকদেখানো কাজকর্মে সামিল করা হয় তখন তা নিয়ে ব্যঙ্গ করা স্বাভাবিক। যখন আপনি দেখবেন ফ্রিজের ভেতরটা মিউজিয়ামের মতো সাজানো আর রঙে রঙে মিলিয়ে কিছু নন ফুড আইটেম দিয়ে বিন্যস্ত, তখন তো এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় অদরকারি জিনিসপত্রকে দরকারি করে দেখানোর অহেতুক মচ্ছবে পরিণত হয়।”
একই বিষয়ে জুডিশের বক্তব্য বেশ ভিন্ন, “ফ্রিজস্কেপিং বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সম্ভব নয়।”
তার মতে এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া। তার প্রথম ফ্রিজস্কেপটি তৈরি করতে তার কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল। তবে এটি তার জন্য বেশ কাজে দেয়।
জুডিশ মনে করেন, খাবার নষ্ট হবার আগেই ফ্রিজস্কেপিং তাকে খেতে উৎসাহিত করে। এই ট্রেন্ডে সামিল হবার আগে তার মনে হতো তিনি স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন না।
ফ্রিজস্কেপিং করার ক্ষেত্রে তিনি প্রতিবার থিমের আশ্রয় নেন। তার মানে, প্রতি সপ্তাহেই তিনি নতুন কিছু রান্না করেন। যখন তার ফ্রিজকে তিনি সাজান ‘মায়াময় বন’ সদৃশ করে, তখন সেটি ভরিয়ে ফেলেন খাবারযোগ্য ফুল দিয়ে। আর যখন তার ফ্রিজের ভেতরটা তিনি সাজিয়ে তোলেন ড্রামা সিরিজ ‘আউটল্যান্ডার’ এর সেটের মতো করে, তখন তিনি বেছে নেন এমন সব পাত্র, যেগুলো উপনিবেশপূর্ব আমেরিকার যুদ্ধের সময়ে পাওয়া যেত।
প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর নতুন কোন থিম দিয়ে ফ্রিজস্কেপিং করেন জুডাশ। নতুন থিমে সাজানো ফ্রিজের দরজা যতবার তিনি খুলেন ততবারই তার ভালো অনুভূতি হয়।
অপরদিকে বিংহাম, ‘মননশীল ভোগ’ এর ধারণা তার টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করে থাকেন। এর মূল কথা হলো, সেটাই কেন যেটা দরকারী এবং রাখার জায়গাও আছে। ফলে তার কাছে এই ফ্রিজস্কেপিং ধারণাটি সাংঘর্ষিক।
তথ্যসূত্র: সিএনএন