Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

ডিএসইতে লেনদেন নামল ৮০০ কোটি টাকার ঘরে

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

দেশের পুঁজিবাজারে পতনধারা অব্যাহত রয়েছে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৮০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমন হওয়া ২২ কোম্পানির দরপতন সোমবার বাজারের পতনের একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। সপ্তাহের শেষ বৃহস্পতিবারও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও বড় পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। দ্বিতীয় দিন সোমবারও পতন হয়েছে বাজারে।

আর এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর মূল্যসংশোধন হচ্ছে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। সে কারণে বাজারে সূচক ও লেনদেন কমছে বলে মনে করছেন তারা।

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৮ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৮৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে।

ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাবে ফিরছিল বাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচক বাড়ে। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।

গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।

গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সেই সূচক ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে। মঙ্গলবার কমে ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট। বুধবার কমে ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। শেষ দিন বৃহস্পতিবার কমেছিল ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার কমে ৫৩ পয়েন্ট। সবশেষ সোমবার কমেছে ২৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে এই ছয় কার্যদিবসে ডিএসইএক্স ১৮৭ পয়েন্টের বেশি কমেছে।

এই দরপতনে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারী সুমন আহমেদ। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা সুমন মিরপুর-১০ নম্বরের একটি ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার লেনদেন করেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আবার সেই পতন, আবার হতাশা। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আসলে কোনও দিনই ভালো হবে না। বেশ ভালোই চলছিল কয়েক দিন; লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিলাম। মনে হচ্ছিল বাজার এখন ভালো যাবে। কিন্তু আবার সেই দরপতন, মন্দা।”

তবে বাজারের এই পতনে আতঙ্কিত না হয়ে শেয়ার ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে, টানা কয়েক দিন সূচক কমেছে; লেনদেনও কমেছে। টানা দশ দিন বাজার চড়ার পর সূচক কিছুটা কমবে—এটাই স্বাভাবিক। এটা মূল্যসংশোধন। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”

“বাজার ঠিক হয়ে যেত। ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমন হওয়া ২২ কোম্পানির দরপতনের কারণে রবিবার বাজারে বড় দরপতন হয়। সোমবারের বাজার পতনেও এই কোম্পানিরগুলোর দরপতন একটি কারণ” যোগ করেন তিনি।

সোমবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৮ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৭ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬১ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। তবে ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, কমেছে ২৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির দর।

লেনদেনও বেশ খানিকটা কমেছে। রবিবার এই বাজারে ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সোমবার তা কমে ৮১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

বাড়তে বাড়তে গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার এই বাজারে লেনদেন এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উঠেছিল।

অন্যদিকে সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৮৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৬১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর। ১৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

ঢাকা পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৪৯টি কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। এরমধ্যে রবিবার থেকে যে ২২টি কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে সেগুলো হলো— অলটেক্স, আরামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক অনলাইন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, কেয়া কসমেটিকস, খুলনা প্রিন্টিং, ন্যাশনাল টি, প্রিমিয়ার লিজিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন, সাফকো স্পিনিং, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ঢাকা ডাইং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, উত্তরা ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার ও জাহিনটেক্স।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স, জিবিবি পাওয়ার ও জাহিনটেক্সের শেয়ার দর সামান্য বাড়লেও বাকিগুলোর বড় পতন হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত