তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তিনি ভারতে গেছেন। মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সোমবার ঢাকায় সেনানিবাসে সাংবাদিকদের সামনে এসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবার দেশে প্রকাশিত সব সংবাদপত্রেই গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে খবরটি। শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর শিরোনাম হয়েছে প্রায় সব সংবাদপত্রেই। চলুন দেখে নেওয়া যাক মঙ্গলবার দেশে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রধান শিরোনাম:
প্রথম আলো
‘ছাত্র–জনতার বিজয়, শেখ হাসিনার বিদায়’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হলো আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সায় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি।”
বাংলাদেশ প্রতিদিন
‘রক্তসমুদ্রে স্বৈরাচারের পতন’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “রক্তসমুদ্রে গোটা দেশ ভাসিয়ে পতন ঘটল স্বৈরশাসকের। ছাত্র-জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চূর্ণ হলো দন্তের অপশাসন। শেখ হাসিনার আচমকা বিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে কারফিউ ভেঙে উল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। রাজপথে নেমে আসে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ।”
যুগান্তর
‘পালালেন শেখ হাসিনা-রেহানা’ শিরোনামে যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করলেন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। তারা আবারও প্রমাণ করলেন গুলি চালিয়ে, হামলা করে বা কোনো বাধাতেই আটকে রাখা যায় না সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে। চোখে আঙুল দিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিলেন রক্তক্ষয়ী একটি গণঅভ্যুত্থানের সফল সমাপ্তি। বন্দুকের নল, শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও কারফিউ ভেঙে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মাঠে নামা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা পাঁচ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
সমকাল
সমকালের প্রধান সংবাদের শিরোনাম ‘ছাত্র-জনতার রক্তে ভেজা বিজয়’। এতে বলা হয়েছে, “ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিভে যায় শত শত প্রাণ। এর বিনিময়ে অবিস্মরণীয় এক জয়ের দেখা পেয়েছে ছাত্র-জনতা। জনবিক্ষোভ দমাতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি শেখ হাসিনার। অবশেষে যবনিকা ঘটল সাড়ে ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়াল দেন। এর আগেই দেশজুড়ে কোটি মানুষ পথে নেমে বিজয় উল্লাসে মাতেন; নেন গণভবনের দখল।”
ইত্তেফাক
‘ছাত্র-জনতার বিজয়’ শিরোনামে ইত্তেফাকের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে বেলা আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপটারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। হেলিকপটারটি ভারতের আগরতলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। পরে সেখান থেকে তিনি একটি ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি গেছেন বলে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। তবে দিল্লিতে তিনি নির্বাসনে থাকছেন না। তৃতীয় কোনো দেশে তিনি চলে যাবেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে রাস্তায় নেমে বিজয়োল্লাশ করেন লাখো জনতা। ঢাকার রাস্তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়।”
কালের কণ্ঠ
‘গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন’ শিরোনামে কালের কণ্ঠের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৩৬ দিনব্যাপী আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলন ছিল দ্বিতীয় দফা আন্দোলন।”
বণিক বার্তা
‘আগস্টেই পালালেন শেখ হাসিনা, দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস’ শিরোনামে বণিক বার্তার প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। গতকাল ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়েন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এর সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটল আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের।”
নয়া দিগন্ত
‘রক্তের বন্যা বইয়ে পালালেন হাসিনা’ শিরোনামে নয়া দিগন্তের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে পদত্যাগ করে গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তার সাথে ছোট বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন। … একচ্ছত্র প্রতাপশালী এই নেত্রীর পলায়নের বিষয়ে অনেকেই বলছেন, তিনি মূলত আওয়ামী লীগকেই ধ্বংস করে দিয়ে গেলেন। কেউ কেউ বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে লজ্জাজনক বিদায়। স্বৈরাচার এরশাদেরও এমন লজ্জাজনক বিদায় হয়নি বলে অনেকে মন্তব্য করেন।”
জনকণ্ঠ
‘দেশ চালাবে অন্তর্বর্তী সরকার’ শিরোনামে জনকণ্ঠের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার করা হবে অঙ্গীকার করে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন এবং শান্ত থেকে আমাকে সহযোগিতা করুন। কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকেল চারটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।”
আজকের পত্রিকা
‘দম্ভের পতন, ছাত্র-জনতার জয়’ শিরোনামে আজকের পত্রিকার প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনা কখনো পালিয়ে যায় না’—১ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে দম্ভভরে বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু তার চার দিন পরই গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে নিভৃতে দেশান্তরি হয়েছেন তিনি। তাঁর এই দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে সব দম্ভের পতন হয়েছে। বিজয় এসেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘স্বৈরশাসকের’ পতন ঘটিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছে তরুণ প্রজন্ম। রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। দেশের ইতিহাসে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর এমন তীব্র আন্দোলন আর হয়নি।”
ভোরের কাগজ
‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত’ শিরোনামে ভোরের কাগজের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকাল ৪টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।”
যায়যায়দিন
‘দেশ ছেড়ে পালালেন হাসিনা-রেহানা’ শিরোনামে যায়যায়দিনের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, “সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃতু্যর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হলো।”