Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ড. নিয়াজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।

গত কয়েক দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে যারা এসেছিলেন, তারা সবাই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক হিসাবেই শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাকে এই পদে নিয়োগ দিল, শিক্ষকদের কোনও সংগঠনে তার কোনও সম্পৃক্ততা দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ প্রজ্ঞা ও পেশাদারির দিক থেকে অনন্য। তাকে কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের সভায় যেতে দেখিনি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের সোয়ানসির ইউনিভার্সিটি অব ‍ওয়েলসে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক নিয়াজকে নিয়োগ দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে আসা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে উপাচার্য পদে ৫ শর্তে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

উপাচার্য পদে তার নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা পাবেন এবং বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্য সুবিধা ভোগ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সার্বক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে থাকতে হবে তাকে।

আর সবশেষ শর্ত হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে যে কোনও সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন আসে। পদত্যাগও করেন অনেকে।

গত ১০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর এই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।

অধ্যাপক কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের নেতা ছিলেন। তার আগের উপাচার্য অধ্যাপক আকতারুজ্জামানও একই দলে ছিলেন।

তারও আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও সেই দলের সমর্থক সাদা দলের শিক্ষকদেরই উপাচার্য পদে দেখা গেছে।

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ সিনেটে ভোটের মাধ্যমে হওয়ার বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

ব্যক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আসা কারও উপাচার্য পদে আসার ঘটনাটি বিরল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক নিয়াজের বাড়ি চট্টগ্রামে। ১৯৮৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে ব্যবস্থাপক হিসাবে কাজ করেন তিনি।

এরপর যুক্তরাজ্যে গিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি অব ‍ওয়েলসে। তার অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল- ‘Development Studies: Public participation, Community based Forest Resource Management’।

এরপর গবেষণা সহকারী হিসাবে যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাজ করেন তিনি।

২০০৫ সালে তিনি অধ্যাপক হিসাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে কাজ শুরু করেন। পরের বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে যোগ দেন তিনি। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।

অধ্যাপক নিয়াজ সর্বশেষ বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য পদে ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপদেষ্টা ছিলেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনেও পড়িয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক নিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজার্ভেশন অব নেচারের বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি হিসাবেও কাজ করেন।

মূলত উন্নয়ন গবেষণাই ড. নিয়াজের কাজের ক্ষেত্র; এরমধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ সম্পদের ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে গবেষণা রয়েছে তার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত