ইসরায়েলকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলো শুক্রবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। রোজারিও মুরিলো দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার স্ত্রী।
দেশটির পার্লামেন্ট শুক্রবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করার পর এই ঘোষণা আসে।
মুরিলো বলেন, “তার স্বামী সরকারকে ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
তবে এটি মূলত একটি প্রতীকী ঘোষণা। কারণ নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়াতে ইসরায়েলের কোনও আবাসিক রাষ্ট্রদূত নেই এবং দুই দেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় অস্তিত্বহীন।
তথাপি ঘোষণাটি ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াবে। কারণ এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজায় নৃশংস জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হামলার প্রসারের মধ্যে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে।
নিকারাগুয়ান সরকার শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের নিন্দা করে বলেছে, যুদ্ধ এখন “লেবাননের বিরুদ্ধে প্রসারিত হয়েছে এবং সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরানকেও মারাত্মকভাবে হুমকি দিচ্ছে।”
লাতিন আমেরিকার দেশগুলো শুরু থেকেই গাজা যুদ্ধের ব্যাপক বিরোধিতা করে আসছে। ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও চিলির মতো দেশের বামপন্থী নেতারা ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করেছেন।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি মিশন শুক্রবার ঘোষণা করেছে, ইসরায়েল গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পর এই তিনটি দেশ তার সমর্থনে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো মে মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসনকে ‘গণহত্যাকারী’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভাও একই মাসে ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেন এবং তিনি গাজার যুদ্ধকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেন।
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার সরকার গত এপ্রিলে ইসরায়েলের কাছে জার্মান অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে একটি আবেদন করেছিলেন। যদিও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে।
অবশ্য নিকারাগুয়া নিজেও লাতিন আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতাসহ অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ ওর্তেগা ও তার সহযোগীরা ভিন্নমতাবলম্বী এবং সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও প্রসারিত করেছে।
ইইউ ২০১৯ সালে ওর্তেগা সরকারের ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তার এক বছর আগে নিকারাগুয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে এবং এতে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স