ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখেছেন, মডেলিং থেকে ধীরে ধীরে বড়পর্দা। ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিজ্ঞাপনচিত্রে ব্রেক পেয়েছেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে কাজ করে।
বিজ্ঞাপনে নিদ্রা নেহার নাম ছিল ‘জুঁই’। ১১ অক্টোবর বড়পর্দায় কুসুম শিকদার পরিচালিত ‘শরতের জবা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হলো তার। এখানেও তার চরিত্রের নাম ফুলের নামে- ‘বেলী’। জুঁই থেকে বেলী-তেই যেন শেষ না হয়ে যায়, মাধ্যম যাই হোক, নানা চরিত্রে রঙিন পর্দায় সুবাস ছড়াতে চান নিদ্রা নেহা।
বড়পর্দায় ছবি মুক্তি, অন্যদিকে পূজা। দারুণ আনন্দের সময় তার। এরই মাঝে কথা হলো তার সঙ্গে, বিজয়া দশমীর দিনে।
‘শরতের জবা’র বেলী হয়ে বড়পর্দায় অভিষেক ঘটলো। চরিত্রটি নিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি আপনার?
নেহা: ‘শরতের জবা’র বেলী চরিত্রটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে বলেই আমি স্ক্রিপ্টটা পছন্দ করেছি। এটা আমার বড়পর্দায় অভিষেক। সকলেরই একটা প্রত্যাশা থাকে যে লিড ক্যারেক্টারে অভিনয় করার, আমি যখন গল্পটা পড়ি তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, জবা এবং বেলী প্যারালাল ক্যারেক্টার। অবশ্যই পুরো গল্প জবা কেন্দ্রিক। কিন্তু বেলী যদি না থাকে তাহলে গল্পটা পরিপূর্ণতা পায় না। বেলী গল্পটাকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। বেলী চরিত্রটি বেলী ফুলের মতো শুভ্র, সফট একটা ক্যারেক্টার। জবাও খুব সুন্দর রহস্যময় একটা চরিত্র। জবা আর বেলীর বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে গল্পটার রহস্য উন্মোচিত হয়। চরিত্রটিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। ক্যারেক্টারটা আমি নিজের মধ্যে অনুভব করেছি বলেই পর্দায় সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পেরেছি-বিগ স্ক্রিনে নিজেকে দেখার পরই বললাম কথাটা.. (হাসি)
নিজেকে প্রথম বড়পর্দায় দেখে কেমন লাগলো?
নেহা: নিজেকে বড়পর্দায় দেখার অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। অনেক বেশি এক্সাইটমেন্টের ব্যাপার, খুবই ভালোলাগার ব্যাপার। আমরা যখন হলে ঢুকি দশ মিনিটের মতো মিস করে ফেলেছিলাম। আমি ঢুকেই নিজেকে দেখলাম পর্দায়, তখন আমি যতোটা না খুশি হয়েছি আমার পরিবার আমার বন্ধুবান্ধব ওদের ফেইসে যে হ্যাপিনেসটা দেখেছি আমাকে বড়পর্দার দেখার কারণে, ওই দৃশ্যটা আমার জন্য অনেক মূল্যবান।
দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
নেহা: দর্শকের রেসপন্স এখন পর্যন্ত ভালোই পেয়েছি। আমার সবচেয়ে ভালোলাগার যে বিষয়টা ছিল, পূজোতে একমাত্র আমাদের ছবিটাই এসেছে, আর কোন ছবি আসেনি। যেহেতু দেশের একটা খারাপ অবস্থা গিয়েছে সবকিছু মিলিয়ে আমরা ভালোই দর্শকের আনাগোনা দেখেছি হলে। আমরা এতটা প্রত্যাশাও করিনি। আমরা দর্শকদের ধন্যবাদ জানাই যারা দীর্ঘবিরতির পর বড়পর্দায় সিনেমা দেখতে আসছেন।
দর্শকের সঙ্গে কোন ‘সুইট মোমেন্ট’?
নেহা: সুইট মোমেন্ট বলতে যদি বলি, আমি যখন সিনেমাটা দেখে বের হই তখন পেছন থেকে একটা কাপল-আংকেল আর আন্টি কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিল, যে তারা শরতের জবা’র নেক্সট পার্ট চায়, আন্টি তার হাজব্যান্ডকে বলছিলেন, ‘আমি তোমাকে বলি, বাংলা সিনেমা দেখাতে। তুমি দেখাতে আনো না, এত সুন্দর বাংলা সিনেমা হচ্ছে’। একথা বলতে বলতে যখন আমাকে ক্রস করছে তখন আমাকে দেখে বললেন, ‘আপনি কি বেলী?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। পরে আমাকে তিনি জড়িয়ে ধরেন, আমার হাত ধরে রাখেন। ছবি তোলেন। সে মুহূর্তটা খুব সুন্দর ছিল।”
কুসুম শিকদার প্রসঙ্গে বলুন। পরিচালক এবং সহঅভিনেতা হিসেবে তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
নেহা: কুসুমদি-কে আমি প্রথম দিকে আমার কো আর্টিস্ট হিসেবেই জানতাম। পরে জানতে পেরেছি তিনি ডিরেকশনটাও দিবেন। প্রথম যখন সেটে যাই তখন আমার প্রথম সিন দিদির সাথেই থাকে। শট শেষ হওয়ার পর, দিদি আমার প্রশংসা করলেন। আমি বললাম, এটা আমার প্রথম ফুল লেন্থ সিনেমায় কাজ। দিদি বললেন, তোমাকে দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে না এটা তোমার প্রথম কাজ। এক্সপ্রেশান খুবই ভালো। ওইদিন দিদির কাছ থেকে কমপ্লিমেন্ট পাওয়ার পরে আরও বেশি ভালোবাসা ও সাহস নিয়ে কাজটা করতে পেরেছি। দিদি কো আর্টিস্ট হিসেবে ‘প্রচণ্ড প্রচণ্ড প্রচণ্ড’ ভালো। যেহেতু অনেক কষ্ট করে অনেক কম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হয়, আমাদের অনেকটা সময় লেট নাইট করে শুটিং প্যাক আপ হয়েছিল, বাট দিদি যখন সেটে থাকেন তখন খুব গল্প-গুজব করে সবাইকে মাতিয়ে রাখে। সো সবকিছু মিলিয়ে দিদি দুর্দান্ত। গল্পটা যেহেতু উনার, আমার মনে হয় না উনার মতো করে কেউ ডিরেকশনটা দিতে পারতো। বেলি চরিত্রটা তো উনারই সৃষ্টি, আমি শুধু উনার নির্দেশনায় সেটা হয়ে উঠেছি।
এবারের পূজা নিশ্চয়ই অনেক স্পেশাল ছিল আপনার জন্য…
নেহা: সত্যিই এবারের পূজাটা অনেক স্পেশালই গিয়েছে। পূজার আনন্দ যেমন থাকে তেমনই ছিল, সঙ্গে আমার সিনেমা রিলিজ হয়েছে আনন্দটা ডাবল হয়ে গিয়েছে, বিয়ের পর প্রথম পূজা সে অর্থে আনন্দটা ট্রিপল হয়ে গিয়েছে। খুব দারুণ কাটলো। আজ পূজার শেষ দিন, সব দর্শকদের বলবো, শুভ বিজয়া। সবচেয়ে ভালো লেগেছে শরতকালে ‘শরতের জবা’- এসেছে। আমরা শুটিংও করেছিলাম ২০২২ সালের শরৎকালে। যেদিন ছবিটা মুক্তি পেল, সেদিন অষ্টমী ছিল, যেটা আমি আমার জন্য খুবই মাঙ্গলিক ভাবি আমার জন্য।
সামনের দিনে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
নেহা: নিজেকে সবসময় অভিনেত্রী হিসেবেই দেখতে চাই। হোক সেটা ছোটপর্দা, হোক সেটা বড়পর্দা, ওটিটি কিংবা টিভি কমার্শিয়াল যে মাধ্যমেই হোক আমি চাই অভিনেত্রী হিসেবেই আমার নামটা খ্যাতি পাক। সবাই আমার ক্যারেক্টারগুলোর মাধ্যমেই আমাকে চিনুক। আমার শুরুটা হয়েছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটা টিভি কমার্শিয়াল থেকে, যেখানে আমার ক্যারেক্টারটার নাম ছিল ফুলের নামে জুঁই। আমি চাই জুঁই থেকে বেলীতেই যেন শেষ না হয়, আরও যেন সুবাস ছড়াতে পারি ক্যারেক্টারের মাধ্যমে। আরও যেন ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে পারি। আমি নাচ থেকে অভিনয়ে আসিনি, ছোটবেলা থেকে নাচটা করি, ভরতনাট্যমের স্টুডেন্ট ছিলাম। এরপর মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের টপ টেন এ ছিলাম। মিস ফটোজেনিক ২০২০ হয়েছিলাম। তারপর নিয়মিত টিভি কমার্শিয়াল করেছি, নাটক হয়ে ওটিটি তারপর বড়পর্দায়।
সামনে কী কী কাজ আসছে আপনার?
নেহা: সামনে আমার খুব ভালো কিছু কাজ আসছে। দর্শকদের বলবো, সামনে চরকি-তে এ বছরই আমার প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’ যেটা পরিচালনা করেছেন কাজী আসাদ ভাই। ওখানেও আমার নাম পুস্প। ওখানেও ফুল.. (হাসি) ওখানে আমার বিপরীতে ছিলেন মোশাররফ করিম ভাই। ওনার মতো ফাইনেস্ট একজন অভিনেতার সাথে কাজ করতে পেরেছি এ জন্য আমি গ্রেটফুল। ওই কাজটাও খুব মিস্টিরিয়াস, হরর। আশা করি দর্শকরা পছন্দ করবেন। এছাড়া ওটিটির আরেকটি কন্টেন্টের কাজ শেষ হলো- আসিফ মাহমুদের ফ্যাকড়া। অ্যাকশন-থ্রিলার টাইপের কাজ। বড়পর্দার আরও দুটি ছবি করেছি, একটি পিকলু চৌধুরীর ‘দাওয়াল’। ফখরুল আরেফিন খানের নীল জোছনা নামে আরেকটি কাজ করেছি, দুই বাংলাতেই রিলিজ হবে। ওখানে পাওলি দামের ছোট বোনের চরিত্র করেছি।
শেষ কথা..
“আমি সবসময় চরিত্রকেই প্রাধান্য দিতে চাই, নায়িকা হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমি চাই ভালো গল্প, ভালো কো আর্টিস্ট, ভালো ডিরেক্টর, দিন শেষে সবকিছু মিলিয়ে ভালো কাজ।”